পরবর্তী রাষ্ট্রদূতের যোগদান বিলম্বিত হওয়ায় ঢাকায় অন্তর্বর্তীকালীন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হিসেবে বিশেষ দায়িত্ব পেয়েছেন কূটনীতিক ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। আগামী সপ্তাহে তিনি তার ঢাকা মিশন শুরু করতে যাচ্ছেন। ঢাকাস্থ দূতাবাস এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর আগে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ মিশন সম্পন্ন করেন আলোচিত রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। তার আগে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঢাকায় পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে কূটনীতিক ডেভিড মিলিকে মনোনয়ন দেন। নির্বাচনী ব্যস্ততাসহ নানা কারণে সিনেটে তার মনোনয়নের শুনানি এবং অনুমোদন না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ডেভিড মিলি ঢাকায় যেতে পারছেন না এটা নিশ্চিত। আগামী ২০শে জানুয়ারি নতুন প্রসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি তার এডমিনিস্ট্রেশন সাজাচ্ছেন। ফলে ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব বুঝে নেয়া, ঢাকার জন্য নতুন দূতের মনোনয়ন, সিনেটের শুনানি এবং অনুমোদনের প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ।
স্মরণ করা যায়, ঠিক ১৭ বছর আগে দুই রাষ্ট্রদূতের ঢাকায় যাওয়া-আসার মাঝখানে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। কাকতালীয় হলেও ২০০৭ সালের মতো এবারও বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব পালনের সময়ে কিছুদিন সিডিএকে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব কিছুদিন পালন করতে হচ্ছে । ওই সময় ২০০৬ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিয়েছিলেন প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস। কিন্তু ১৪ মাসের মাথায় পররাষ্ট্র মন হঠাৎই প্মা প্রশাসন তাকে ইরাকে উপ-রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ফলে তিনি তাড়াহুড়ো করেই ঢাকা ছেড়ে যান।
২০০৮ সালের এপ্রিলে জেমস এফ মরিয়ার্টি পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দেয়ার আগে ৯ মাস ঢাকার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব সামলেছিলেন গীতা পাসি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র অফিস জানিয়েছে- ঢাকা মিশনের দায়িত্ব পাওয়ার পর জ্যাকবসন বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারনা নেয়ার জন্য বুধবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসাদ আলম সিয়ামের সঙ্গে বৈঠক করেন। জানা গেছে, বাংলাদেশে সংস্কার প্রক্রিয়া ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পালনের জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।
ঢাকা দূতাবাসের ভাষ্য
ইতিমধ্যে ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনকে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হিসেবে স্বাগত জানাচ্ছে ঢাকা, সেখানকার দূতাবাস এমন শিরোনামে একটি বার্তা প্রচার করেছে বৃহস্পতিবার। বার্তায় বলা হয়, সিনিয়র ফরেন সার্ভিসের একজন অভিজ্ঞ সদস্য ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন ২০২৫ সালের ১১ই জানুয়ারি থেকে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স, অ্যাড ইন্টেরিম হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তার গৌরবময় কূটনৈতিক জীবনে তিনি তিনবার যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন- তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং কসোভোতে।
সাম্প্রতিক সময়ে অ্যাম্বাসেডর জ্যাকবসন নিকট প্রাচ্য বিষয়ক ব্যুরোতে ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। তার আগে, তিনি ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স, অ্যাড ইন্টেরিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বিদেশে উচ্চপদস্থ নেতৃত্বের পাশাপাশি প্রথমে স্কুল অব প্রফেশনাল অ্যান্ড এরিয়া স্টাডিজের ডিন এবং পরে ন্যাশনাল ফরেন অ্যাফেয়ার্স ট্রেনিং সেন্টারের উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ফরেন সার্ভিসের ভবিষ্যৎ গঠনে অবদান রেখেছেন অ্যাম্বাসেডর জ্যাকবসন। অ্যাম্বাসেডর জ্যাকবসন আরও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলে ডেপুটি এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি এবং সিনিয়র ডিরেক্টর ফর এডমিনিস্ট্রেশন হিসেবে কাজ করা এবং লাটভিয়ার রিগায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর হিসেবে দায়িত্ব পালন।
অ্যাম্বাসেডর জ্যাকবসন জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব অ্যাডভান্সড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ থেকে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে একাধিক সম্মাননা পেয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে সেক্রেটারির ডিস্টিংগুইশড সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড, দুইটি প্রেসিডেন্সিয়াল র্যাঙ্ক অ্যাওয়ার্ড এবং দ্য অর্ডার ফর পিস, ডেমোক্রেসি অ্যান্ড হিউম্যানিজম “ইব্রাহিম রুগোভা”। অ্যাম্বাসেডর ট্রেসি জ্যাকবসন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স, অ্যাড ইন্টেরিম হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর মেগান বোল্ডিন ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে ডেপুটি চিফ অব মিশন হিসেবে তার পূর্বের দায়িত্ব পুনরায় গ্রহণ করবেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: