প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট

বিদ্যুৎ লাইনের ‘লুজ কানেকশন’ থেকে সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:১৯

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি

কোনো নাশকতা নয়, বিদ্যুতের ‘লুজ কানেকশন’ থেকেই আগুন লেগেছিল সচিবালয়ে। ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে এমনটিই জানিয়েছে। প্রতিবেদনটি মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেছে কমিটি।

তদন্ত কমিটির প্রধান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গণি পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা আমাদের প্রাথমিক অনুসন্ধান। বৈদ্যুতিক লুজ কানেকশন থেকে আগুন লাগে। তদন্ত কমিটির সবাই একমত হয়েছেন। এতে অন্য কোনো সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।’
জানা গেছে, ১৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনের প্রথম সাতটি পৃষ্ঠা ছবিযুক্ত বর্ণনা। বাকিটা জুড়ে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল, সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টাকে দেওয়ার পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার গেটে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন নাসিমুল গণি, কমিটির সদস্য বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব হাসান ও ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল।

গত বুধবার দিবাগত রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট টানা ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় ওই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আগুনে ভবনটির চারটি তলায় অবস্থিত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; সড়ক পরিবহন ও সেতু; ডাক ও টেলিযোগাযোগ; যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র, কম্পিউটার ও আসবাব পুড়ে যায়।

পুড়ে যাওয়া নথি ফিরে পাওয়া সম্ভব কি না, এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রসচিব নাসিমুল গণি বলেন, ‘আমি পুরো ভবনটি দেখেছি। কয়েকটা রুম পুড়েছে। কিন্তু নথি যেখানে থাকে, সেখানে কিছু পোড়েনি। কিন্তু তারপরও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো কাল বা পরশু নিজেরা অডিট করা শুরু করবে।’

সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার আলামত সেনাবাহিনীর আইডি ফিউশন সেন্টারে পরীক্ষা করা হয়েছে জানিয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব হাসান বলেন, পুড়ে যাওয়া ফ্লোরগুলোয় কোনো ধরনের বিস্ফোরক পাওয়া যায়নি। ডগ স্কোয়াড দিয়ে সার্চ করিয়েছেন। ফায়ার সার্ভিস থেকে যে নমুনা পাওয়া গেছে, তাতেও কোনো ধরনের বিস্ফোরক পাওয়া যায়নি।

অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বলেন, ‘আগুনের সূত্রপাতের সময় রাত ১টা ৩২ থেকে ১টা ৩৯ মিনিট। সূত্রপাত একটি নির্দিষ্ট সময়ে নয়, সাত মিনিট ধরে আস্তে আস্তে স্পার্কের মাধ্যমে যে জায়গায় আগুন লেগেছে, সেটি গরম হয়েছে। সেখান থেকে বিভিন্ন জিনিস গলে পড়েছে। তারপর সেটা একসময় আগুন লাগার মতো উত্তপ্ত হয়। মোটামুটি ১২-১৪ মিনিটে যে আগুন উৎপাদিত হয়েছে, সেটি ছড়িয়ে চূড়ান্ত আগুনে রূপায়িত হয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি, আগুন এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে।’

অগ্নিকাণ্ডে কারও অবহেলা আছে কি না, এমন প্রশ্নে মাকসুদ হেলালী বলেন, ‘আমাদের আইনে আছে, প্রতিবছর বৈদ্যুতিক লাইনগুলো পরীক্ষা করা; কিন্তু সেটা ১০ বছরেও করি না। এটা ভুল।’

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, করিডরে আগুন থাকায় নেভাতে দেরি হয়েছে, কলাপসিবল গেট থাকায় তা কেটে ভেতরে ঢুকতে হয়েছে। ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কারণে আগুন বেশি ছড়িয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এক ঘণ্টা ধরে রিপোর্টটি শুনেছেন। পরে তিনি তদন্ত কমিটির কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ চেয়েছেন, যাতে সচিবালয়ে এ রকম অগ্নিকাণ্ড না ঘটে। এবং এটার জন্য যত রকমের ব্যবস্থার প্রয়োজন, তা যেন নেওয়া যায়।

নথি পোড়াতেই কি পরিকল্পিত নাশকতানথি পোড়াতেই কি পরিকল্পিত নাশকতা
ভবিষ্যতের জন্য তদন্ত কমিটির সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন আগামী ১০ দিনের মধ্যে স্বল্প ও দীর্ঘস্থায়ী সুপারিশ দেওয়ার জন্য। আশা করি, আমরা সেটা করতে পারব। আমাদের সুপারিশ থাকবে, বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোর্ডের নিয়মমাফিক নিয়মিত মেইনটেইন করা হোক। কিন্তু করবে কি না, সেটা প্রশাসনের ব্যাপার।’

ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি মেরামতযোগ্য কি না এমন প্রশ্নে মাকসুদ হেলালী বলেন, যতটুকু নষ্ট হয়েছে, তা মেরামতযোগ্য।

লুজ কানেকশন থেকে আগুন লেগেছে প্রমাণিত হলে কী কারণে আলামত পরীক্ষার জন্য বাইরে পাঠানো হচ্ছে—জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘একটা কথা উঠতে পারে। কেউ দূর থেকে করল কি না; সেটার পরীক্ষা করা প্রয়োজন, যা আমাদের দেশে হয় না। আলামত পরীক্ষার বিষয়ে বুয়েট ও ফায়ার সার্ভিস কিছু পরামর্শ দিয়েছে। কিছু পরীক্ষা আর্মি ল্যাবে চলছে। আর কিছু আমরা সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়াতে পাঠাব; যাতে প্রযুক্তিগুলো আমরা রপ্ত করতে পারি।’

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: