ভারতের আদানি পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধি পেলেও একই দিনে কয়লা সংকটের কারণে এস আলম গ্রুপের প্ল্যান্টটি বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে একই কারণে গত ৫ জুন বাংলাদেশের পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে যায়। ৮ জুন, বৃহস্পতিবার রাত ৩টা বেজে ৪৩ মিনিটে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ আবারো শুরু হয়।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পর কমেছে বিদ্যুতের চাহিদা, কিন্তু তারপরও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে অনেক এলাকাতেই। কারণ চাহিদা কমলেও, খুব একটা বাড়েনি বিদ্যুতের উৎপাদন।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি) কর্তৃক জারি করা একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি অনুযায়ী, আজ শনিবার সকাল ৯টায় প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৬০৭ মেগাওয়াট ছিল বলে জানা গেছে।
গতকাল শুক্রবার আনুমানিক দুপুর ২টা বেজে ৪৬ মিনিটে বাংলাদেশের একটি সঞ্চালন লাইনে অনাকাঙ্ক্ষিত ট্রিপিংয়ের কারণে আদানি প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে ভারতের ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা এলাকায় অবস্থিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে সাময়িক বিঘ্ন ঘটে।
এ ঘটনার পরপরই বাংলাদেশের পিজিসিবি'র প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদরা দ্রুত সমস্যাটি চিহ্নিত করেন এবং গতকাল বিকেল ৩টা বেজে ৬ মিনিটে সঞ্চালন লাইনটি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন। পাওয়ার প্ল্যান্টে সমস্ত প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর আদানি কর্তৃপক্ষ রাত ৩টা ৪৩ মিনিটে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় শুরু করে।
আদানির গোড্ডা থার্মাল প্ল্যান্টকে তাদের দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য বরাবরই জোর দিয়ে আসছিল বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। দ্বিতীয় ইউনিটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু করার সময়সীমা পার করে ফেলেছে আদানির থার্মাল প্ল্যান্ট। বিপিডিবি'র উদ্যোগের ফলে আদানির গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্ট এই মাসের প্রথম সপ্তাহে তাদের প্রি-কমিশনিং পরীক্ষা শুরু করেছে।
১-২ জুন এই প্ল্যান্ট থেকে প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল ১,০৭০ মেগাওয়াট। বৃহস্পতিবার এর অপারেশন পুনরায় শুরু করার আগে কয়েক দিনের জন্য দ্বিতীয় ইউনিটের সঞ্চালন বন্ধ ছিল।
আদানি পাওয়ার (ঝাড়খন্ড) লিমিটেডের ঢাকা অফিসের কর্মকর্তারা জানান, প্রি-কমিশনিং পরীক্ষার অংশ হিসেবে তারা আরও সাত দিন পূর্ণ ক্ষমতায় দ্বিতীয় ইউনিটটি সচল রাখবেন।
"ইউনিটটি ১৫ জুনের মধ্যে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত হবে," বিদ্যুৎকেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা বলেন।
গত ৯ এপ্রিল থেকে আদানির গোড্ডা ১,৬০০ মেগাওয়াট থার্মাল প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিটটি বাংলাদেশে গড়ে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। আদানির প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম মূলত ২০২২ সালের জুলাই মাসে এবং দ্বিতীয় ইউনিটের কার্যক্রম একই বছরের ডিসেম্বরে শুরু হওয়ার কথা ছিল।
পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হওয়ার পর বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান হিসাবে এসএস ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কথা উল্লেখ করা হয়।কিন্তু তবুও সংকট কমেনি এস আলম প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায়। কয়লা সংকটের কারণে বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় বন্ধ হয়ে যায় এটি। এর মাত্র তিন দিন আগেই প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিটের প্রি-কমিশনিং টেস্ট চালানো হয়।
এসএস পাওয়ারের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর মো. ফয়জুর রহমান বলেন, "১৮ জুনের মধ্যে কয়লার একটি চালান আসার কথা আছে। সেটি আসলেই কেবল প্ল্যান্টটি আবার সচল করা সম্ভব হবে।"
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস ও ডলারের বিনিময় হার বাড়তে থাকায় জ্বালানী আমদানিতে সংকটের কারণে গত ৫ জুন দেশের বৃহত্তম পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি উন্নত করতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সম্ভাব্য সব বিকল্প দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে। বৃহস্পতিবার রাত ২টায় দেশে ঘণ্টার সর্বোচ্চ লোডশেডিং ছিল ২,৯৭৫ মেগাওয়াট; যা ৭ জুন ছিল ৩২০০ মেগাওয়াট।
সূত্র : দ্য বিজনেস স্ট্যানডার্ড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: