শেখ হাসিনার শাসনামলে গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার : গভর্নর

Israt Jahan | ২৮ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:৩৫

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি

শেখ হাসিনার শাসনামলে ক্ষমতাবান ব্যবসায়ীরা গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় ব্যাংকিং খাত থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। ব্রিটিশ প্রভাবশালী গণমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা দফতরের (ডিজিএফআই) সাবেক কিছু কর্মকর্তা শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক দখল করতে সহায়তা করেছেন।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের সদস্যরা বড় বড় ব্যাংক দখলে সহায়তা করেছিল, যার ফলে পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের বাইরে অর্থ পাচার করা হয়। মনসুরের মতে, নতুন শেয়ারহোল্ডারদের ঋণ এবং আমদানি চালান বেশি দেখিয়ে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা বা ১৬.৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে।

মনসুরের দাবি, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এটি ছিল ব্যাংকের সবচেয়ে বড় ডাকাতি। তিনি বলেন, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের ওপর চাপ প্রয়োগ না করলে এই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এত বড় জালিয়াতি সম্ভব হতো না।

গভর্নর বিশেষভাবে এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের নাম উল্লেখ করে এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় সাইফুল আলম কমপক্ষে ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে পাচার করেছেন।

‘প্রতিদিন তারা নিজেদেরকে ঋণ দিচ্ছিল,’ মনসুর উল্লেখ করেন।

মনসুর জানান, তিনি শেখ হাসিনার সহযোগীদের বিদেশি সম্পদের তদন্তের জন্য যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ব্যাংকের পরিচালকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তাদের শেয়ার সাইফুল আলমের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য করতেন। তারা ‘পরিচালকদের তাদের ঘর থেকে তুলে এনে’ জোর করে ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তন করতেন।

তিনি বলেন, একের পর এক ব্যাংক একইভাবে দখল করা হয়েছিল।

এদিকে, একটি ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, জোর করে ব্যাংক দখলের প্রক্রিয়ায় তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল।

ইসলামী ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ২০১৩ সালে ‘তৎকালীন সরকারের সাথে জড়িত লোকেরা’ তার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। এর মধ্যে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের পরামর্শমতো পরিচালক নিয়োগ এবং ব্যাংকের একজন বিদেশী পরিচালকের হোটেল রুমে ‘সরকারি সংস্থার সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের’ দ্বারা তল্লাশি চালানো।

মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ২০১৭ সালে তিনি যখন ব্যাংকের পর্ষদ সভায় যাচ্ছিলেন, তখন তাকে একজন জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার সাথে দেখা করতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এরপর পুরো একটি দিন তাকে আটকে রেখে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।

তিনি আরো বলেন, ‘তারা ব্যাংকের জাল কাগজপত্র তৈরি করেছিলেন। আমাকে শেষ পর্যন্ত একটি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়েছিল।’

গত দশকে এস আলম গ্রুপ ব্যাংকিং ব্যবসায় নাম লিখিয়েছে। গ্রুপের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সাতটি ব্যাংকে তাদের ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ’ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।

সাইফুল আলমের পক্ষে আইনি প্রতিষ্ঠান কুইন এমানুয়েল আরকুহার্ট অ্যান্ড সুলিভান একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে এস আলম গ্রুপ জানিয়েছে, গভর্নরের অভিযোগের ‘কোনো সত্যতা নেই’।

এতে বলা হয়, ‘এস আলম গ্রুপ ও বাংলাদেশের আরো কিছু শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের সমন্বিত প্রচারণা এমনকি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করার মৌলিক নীতির প্রতি সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।’

এছাড়া, ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) মন্তব্যের জন্য তাদের অনুরোধে সাড়া দেয়নি এবং ডিজিএফআইয়ের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: