৩ গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নিয়ে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফে যাচ্ছে বাংলাদেশ

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১৪ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:৫৮

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আসন্ন বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভায় বাংলাদেশ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছে। এবারের সভায় বাংলাদেশ সাইড লাইনে দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সঙ্গে আলাদা একাধিক বৈঠক করবে। এসব বৈঠকে তিনটি ইস্যু প্রাধান্য দেবে। এগুলোর মধ্যে অগ্রাধিক পাবে আইএমএফ থেকে বাড়তি ঋণের ৩০০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করা। দ্বিতীয় গুরুত্ব, বাংলাদেশ থেকে পাচার টাকা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে জব্দ করে রাখা এবং তৃতীয় গুরুত্ব ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও ১৫ বছরের লুটপাটের চিত্র তুলে ধরা।

সূত্র জানায়, আগামী ২১ থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ওয়াশিংটনে এ বৈঠক হবে। এতে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। বাংলাদেশের পক্ষে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। এর আগে সংস্থা দুটির পরপর দুটি বৈঠকে নেতৃত্বে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। ফলে নতুন পরিস্থিতিতে বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য আলোচনার বিষয়ও পরিবর্তন হয়ে গেছে। আগের বৈঠকগুলোতে সংস্থা দুটি থেকে শুধু বাড়তি সহায়তা আদায় ও বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হতো। এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপট যুক্ত হয়েছে।

গত আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এই সংকট কাটাতে নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়েই আইএমএফের কাছে আরও ৩০০ কোটি ডলার সহায়তা চেয়েছে। এর আগে আইএমএফ ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের অনুকূলে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। ওই বছরের এক ফেব্রুয়ারি ঋণের প্রথম কিস্তি হিসাবে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ছাড় করে। একই বছরের ডিসেম্বরে ছাড় করে দ্বিতীয় কিস্তি বাবদ ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। গত ২৪ জুন তৃতীয় কিস্তি বাবদ ছাড় করেছে ১১৫ কোটি ডলার। তিন কিস্তিতে মোট পেয়েছে ২৩১ কোটি ডলার। চতুর্থ কিস্তির অর্থ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পাওয়ার কথা।

চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতা আরও ৩০০ কোটি ডলার বাড়ানোর প্রস্তাবের কারণে বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও চতুর্থ কিস্তির ছাড়ের শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইএমএফের একটি মিশন বাংলাশে সফর করে গেছে। ওই মিশন ৩০ সেপ্টেম্বর একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া সংস্কার কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়ে আইএমএফ বলেছে, এ কাজে তারা বাড়তি সহায়তা করতে নীতিগতভাবে সম্মত। এ বিষয়ে আসন্ন আইএমএফের বার্ষিক সভায় বিস্তারিত আলোচনা হবে। 

এদিকে গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বাংলাদেশ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ পাচার করেছেন সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা। এছাড়া মন্ত্রী, এমপি ও রাজনৈতিক নেতারাও টাকা পাচার করেছেন। এসব টাকার গন্তব্য ও কারা পাচার করেছেন সে বিষয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছে। এসব তথ্যের আলোকে বৈঠকে অংশ নেওয়া সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করবে।

এসব লক্ষ্য নিয়ে ওইসব দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবে বাংলাদেশ। বৈঠকে দেশের পক্ষ থেকে আপাতত পাচারকারীদের সম্পদ জব্দ করার প্রস্তাব দেওয়া হবে। এজন্য যারা টাকা পাচার করেছেন তাদের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সব ধরনের তথ্য-প্রমাণ দেওয়া হবে। বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংকসহ অন্য উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গেও আলোচনা হবে। পাইপলাইনে আটকে থাকা অর্থ ছাড়সহ ঋণের জোগান বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র সংস্কার ও বিদায়ি সরকারের আমলে গণহত্যার বিষয়টিও তুলে ধরা হবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: