দিল্লিতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের পক্ষ থেকে ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ দেওয়া হয়েছে। এই ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে তিনি বিশ্বের যেকোনো দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন। ৯ অক্টোবর, বুধবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা পরিবারের ঘনিষ্ঠ এবং যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
দিল্লিতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের পক্ষ থেকে ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ দেওয়া হয়েছে। এই ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে তিনি বিশ্বের যেকোনো দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন। ৯ অক্টোবর, বুধবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা পরিবারের ঘনিষ্ঠ এবং যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তবে বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারের মতামত জানতে চাইলে কেউ এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ওই নেতা জানান, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) যে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেওয়া হয়েছে, তাতে বিশ্বের যেকোনো দেশের ভিসা নিয়ে ভ্রমণও করতে পারবেন তিনি। তবে আপাতত ভারতেই শেখ হাসিনাকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শেখ হাসিনার গুরুত্ব বিবেচনায় ভারত তার জন্য ট্রাভেল ডকুমেন্টের বিশেষ ব্যবস্থা করেছে উল্লেখ করে ওই নেতা আরও জানান, ট্রাভেল ডকুমেন্ট পেলেও আপাতত শেখ হাসিনা ভারতেই থাকবেন। শিগগিরই ভারতের বাইরে ভ্রমণে যাওয়ার তার কোনো পরিকল্পনা নেই।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী ব্রিফিংয়ের জন্য অপেক্ষা করুন। সেখানে প্রশ্ন করুন। দেখুন, মুখপাত্র কী বলেন। এ জবাবের মাধ্যমে আপাতত ভারতীয় কর্তৃপক্ষ শেখ হাসিনাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট প্রদানের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর বিষয়টি এড়িয়ে গেল বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে এ ব্যাপারে ভারতের একজন সাবেক শীর্ষ কূটনীতিবিদ মন্তব্য করেছেন, সত্যিই যদি ভারত শেখ হাসিনাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়ে থাকে, তাহলে তাতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে এটিই সবচেয়ে স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত পদক্ষেপ। ভারতের ম্যাকলিয়ডগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় যে কয়েক লাখ তিব্বতি শরণার্থী থাকেন, তারাও এই ধরনের ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ নিয়েই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আসা-যাওয়া করেন।
উল্লেখ্য, ট্রাভেল ডকুমেন্ট কোনো পাসপোর্ট নয়, ভারত সরকারের জারি করা একটি বিশেষ ধরনের ‘পরিচয়পত্র’; যা দিয়ে অন্য দেশে আসা-যাওয়া করা যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশও এতে ভিসা দেয়। কাগজে-কলমে এর নাম ‘আইডেন্টিটি সার্টিফিকেট’ বা আইসি। ভারতের সাধারণ পাসপোর্টের রঙ গাঢ় নীল হলেও আইসির রঙ হয় হলুদ। এর আকার হয় বুকলেটের মতো।
তিব্বতি ধর্মগুরু চতুর্দশ দালাই লামা ১৯৫৯ সালে চীন থেকে ভারতে আসেন এবং রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেন। তাকেও এই ধরনের একটি ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ দেওয়া হয়েছে। আবার যেসব তিব্বতি ভারতে জন্মগ্রহণ করেছেন তারা জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক হওয়ার অধিকারী। কিন্তু তাদের অধিকাংশই ভারতীয় পাসপোর্ট না নিয়ে এই ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়েই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলাফেরা করেন।
ভারতের ওই কূটনীতিবিদ বলেন, শেখ হাসিনাকে শেষ পর্যন্ত ভারত রাজনৈতিক আশ্রয় (পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম) দেবে কি না জানা নেই। তবে কিন্তু গত দুই মাসের ঘটনাপ্রবাহ থেকে দালাই লামার ঘটনার সঙ্গে শেখ হাসিনার কেসের অনেক মিল পাওয়া যাচ্ছে। দালাই লামাও যেমন ভারতে বসে রাজনীতি ও কূটনীতি চালিয়ে গেছেন এবং বিশ্বের বহু দেশে সফর করেছেন। শেখ হাসিনাও তাই করবেন এবং রাজনৈতিক প্রয়োজনে বিশ্বময় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে তাকেও ভারতের বাইরে যেতে হবে, এটাই স্বাভাবিক। সে বিবেচনায় যদি ভারত শেখ হাসিনাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেওয়া হয় তাহলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বরং এই পরিস্থিতিতে এটাই সবচেয়ে স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত পদক্ষেপ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: