বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ছয়টি আন্তর্জাতিক রুট চলছে লোকসান দিয়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোকসানে আছে জাপানের নারিতা ও যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার রুটের ফ্লাইট। এ অবস্থায় আগামী অক্টোবর থেকে দুটি রুটেই সপ্তাহে একটি করে ফ্লাইট কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। যথেষ্ট যাত্রী না থাকায় এরই মধ্যে কমানো হয়েছে কলকাতা ও দিল্লি রুটের ফ্লাইট। এই নিরাশার অন্ধকারে আশার আলো দেখাচ্ছে টরন্টো রুট। চাহিদা থাকায় অক্টোবরের শেষ নাগাদ ফ্লাইট বাড়ানো হচ্ছে এ রুটে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্রে জানা গেছে, লোকসানি ছয়টি রুট হচ্ছে নারিতা, ম্যানচেস্টার, দিল্লি, কুয়েত সিটি, কলকাতা ও গুয়াংজু। এর মধ্যে নারিতা রুটেই প্রতি মাসে গড়ে লোকসান হচ্ছে ২০ কোটি টাকা। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকমতো সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই নারিতা রুটে সপ্তাহে তিনটি করে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছিল বিমান কর্তৃপক্ষ। লোকসান কমাতে আগামী ২৯ অক্টোবর থেকে নারিতা রুটে একটি ফ্লাইট কমিয়ে সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অব্যাহত লোকসানের কারণে ২০০৬ সালে নারিতা রুটে ফ্লাইট বন্ধ করেছিল বিমান। টানা ১৭ বছর বন্ধ থাকার পর বছরের সেপ্টেম্বর থেকে রুটটি আবারও চালু করা হয়। নারিতা রুট আবার চালুর পর ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আট মাসের যাত্রী পরিবহন, রাজস্ব আয় ও পরিচালনা ব্যয় নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন দেয় বিমানের বাণিজ্যিক শাখা। প্রতিবেদনে বলা হয়, নারিতা রুটে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ১ কোটি ৩৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার লোকসান হয়েছে। ডলারের চলতি দামে তা টাকার অঙ্কে ১৬০ কোটির বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৭১ আসন সক্ষমতার উড়োজাহাজ দিয়ে চালানো নারিতা ফ্লাইটে প্রথম আট মাসে সর্বোচ্চ ৫৬ হাজার ৩৬৮ জন যাত্রী পরিবহন করার সুযোগ ছিল। কিন্তু অর্ধেকের বেশি আসন খালি রেখে বিমান যাত্রী পরিবহন করেছে মাত্র ২৭ হাজার ৬৯১ জন। আবার সরাসরি ফ্লাইট হওয়ার পরও তৃতীয় দেশে ট্রানজিট দিয়ে পরিচালিত অন্য এয়ারলাইনসগুলোর তুলনায় কম ভাড়া রেখেছে বিমান।
যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার রুটেও লোকসান দিয়ে সপ্তাহে তিনটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ঢাকা-ম্যানচেস্টার-ঢাকা রুটের প্রতি ফ্লাইটে গড়ে বিমানের ক্ষতি ১ কোটি ১০ লাখ টাকা।
আরওপড়ুন
জাতিসংঘ মঞ্চে নেতানিয়াহু উঠতেই কেন ওয়াকআউট করলেন বিশ্বনেতারা
আন্তর্জাতিক আদালতে হাসিনার বিচার নিয়ে আলোচনা
এ অবস্থায় লোকসান কমাতে আগামী ২২ অক্টোবর থেকে ম্যানচেস্টার রুটে একটি ফ্লাইট কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। যাত্রী ধরতে ম্যানচেস্টার রুটে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড়ের ঘোষণাও দিয়েছে বিমান। আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ম্যানচেস্টার থেকে বাংলাদেশগামী ৬০ বছরের বেশি বয়সী যাত্রীদের জন্য ৩০ শতাংশ এবং অন্যান্য যাত্রীর জন্য ২০ শতাংশ মূল্যছাড় দেওয়া হবে।
জানা গেছে, ইতিমধ্যেই কলকাতা ও দিল্লি রুটেও নিয়মিত লোকসান দিচ্ছিল বিমান। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ভারত ভিসা কমিয়ে দেওয়ায় মারাত্মক যাত্রীসংকট দেখা দিয়েছে রুটটিতে। এ অবস্থায় ঢাকা-কলকাতা রুটের সাপ্তাহিক ফ্লাইট ১৪ থেকে কমিয়ে সাতটি করা হয়েছে। অন্যদিকে আগে ঢাকা-দিল্লি রুটে সপ্তাহে সাতটি ফ্লাইট থাকলেও বর্তমানে চলছে তিনটি।
মধ্যপ্রাচ্যে লাভজনক করার চেষ্টা
৪ জুলাই জাতীয় সংসদ ভবনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিমানের দেওয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু বাড়তি ওজনের ব্যাগেজ বহনের সুযোগ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের চারটি রুট লাভজনক করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে আবুধাবি, শারজা, দোহা ও মাসকাট। বিমানের ওই প্রতিবেদনে লাভজনক রুট হিসেবে উল্লেখ করা হয় লন্ডন, টরন্টো, মদিনা, রিয়াদ, জেদ্দা, দাম্মাম, দুবাই, ব্যাংকক, কাঠমান্ডু, কুয়ালালামপুর ও সিঙ্গাপুরকে। এতে বলা হয়, বিমানের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। নতুন আন্তর্জাতিক গন্তব্যে যোগ হচ্ছে মালে, কুনমিং, সিডনি, জাকার্তা, সিউল, উহান এবং বাহরাইন। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ নিউইয়র্ক রুটে ফ্লাইট আবার চালুর চেষ্টা অব্যাহত থাকার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটিকে লাভজনক করতে বিমানের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানানো হয়। এর মধ্যে আছে যাত্রীপ্রতি রাজস্ব বৃদ্ধি ও ব্যয়সংকোচন এবং সময়সূচি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা।
জানা গেছে, যাত্রী চাহিদা বাড়ায় কানাডার টরন্টো রুটে ফ্লাইট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। ঢাকা-টরন্টো-ঢাকা রুটে আগামী ৩১ অক্টোবর (শীতকালীন সূচি) থেকে আরেকটি ফ্লাইট যোগ করা হয়েছে। সেদিন থেকে ঢাকা-টরন্টো-ঢাকা রুটে সপ্তাহে প্রতি শনি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার তিনটি ফ্লাইট চলবে। বৃহস্পতিবারের ফ্লাইটটি হচ্ছে নতুন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বলেন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চলমান রুটের লাভ-ক্ষতি যাচাই করা বিমান সংস্থার নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। এর অংশ হিসেবেই যাত্রী কম থাকায় অক্টোবর থেকে নারিতা ও ম্যানচেস্টার রুটে সপ্তাহে একটি করে ফ্লাইট কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। একইভাবে চাহিদা বাড়ায় টরন্টো রুটে সপ্তাহে একটি ফ্লাইট বাড়ানো হচ্ছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: