অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এ সরকারের কাছে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক, সে প্রত্যাশা পূরণে মানুষকে কিছুটা ধৈর্য ধরতে হবে। ২৫ আগস্ট, রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেয়ার ১৭ দিন পর এ দিনই প্রথম জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন অধ্যাপক ইউনূস।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে সমর্থন দেয়ার জন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ২৬ মিনিট দীর্ঘ ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সরকার প্রস্তুত, কিন্তু সেজন্য ধৈর্য ধরতে হবে।
তিনি বলেন, ‘এখনই সব দাবি পূরণ করার জন্য জোর করা, প্রতিষ্ঠানে ঢুকে ব্যক্তি-বিশেষকে হুমকির মধ্যে ফেলা, মামলা গ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করা, বিচারের জন্য গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে আদালতে হামলা করে আগেই একধরনের বিচার করে ফেলার যে প্রবণতা, তা থেকে বের হতে হবে।’
‘ছাত্র–জনতার বিপ্লবের গৌরব ও সম্ভাবনা এসব কাজে ম্লান হয়ে যাবে, নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রচেষ্টাও এতে ব্যাহত হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, একটা বিশেষ ব্যাপারে আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিন সচিবালয়ে, আমার অফিসের আশপাশে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করা হচ্ছে। গত ১৬ বছরের অনেক দুঃখ-কষ্ট আপনাদের জমা আছে। সেটা আমরা বুঝি। আমাদের যদি কাজ করতে না দেন তাহলে এই দুঃখ ঘোচানোর সব পথ বন্ধ হয়ে থাকবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ আমাদের কাজ করতে দিন। আপনাদের যা চাওয়া তা লিখিতভাবে আমাদের দিয়ে যান। আমরা আপনাদের বিপক্ষ দল নই। আইনসঙ্গতভাবে যা কিছু করার আছে আমরা অবশ্যই তা করব।
তিনি বলেন, আমাদের ঘেরাও করে আমাদের কাজে বাধা দেবেন না। সবাই মিলে তাদের বোঝান তারা যেন এ সময়ে তাদের অভিযোগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমাদের দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধা না দেন।
দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময়ে বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সব খাতে সংস্কার করা হবে।
আয়নাঘরের মতো অপকর্মের বিচার, রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং পুলিশ কমিশন গঠনের কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
এছাড়া জাতির উদ্দেশে দেয়া নিজের প্রথম ভাষণে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা এবং এজন্য আইনের নিপীড়নমূলক ধারা সংশোধনের কথাও বলেছেন অধ্যাপক ইউনূস।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দাবিতে আন্দোলনে নিহত ছাত্র-জনতাকে স্মরণ এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে ভাষণ শুরু করেন প্রধান উপদেষ্টা।
জুলাই ও আগস্টে ছাত্রবিক্ষোভ দমনে চালানো নিপীড়ন তদন্তে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, এ সপ্তাহেই সে কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
এছাড়া জুলাই গণহত্যার স্মৃতি ধরে রাখতে একটি ফাউন্ডেশন গঠন করা হবে, যার চেয়ারম্যান হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা নিজেই দায়িত্ব পালন করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
তিনি প্রতিশ্রুতি দেন জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্রদের আন্দোলন দমনে সময় করা গায়েবি সব মামলা প্রত্যাহার হবে।
চলতি মাসের ৫ তারিখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের তিন দিন পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।
পরদিন রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নেন উপদেষ্টারা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: