বাংলাদেশ নতুন করে উত্তাল হয়ে ওঠার খবর আবারও উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। এতে স্থান পেয়েছে শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি। এতে শিক্ষার্থীদের ঘোষিত সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কথা গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করেছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা’ শিরোনামে এএফপির প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনকারী নেতারা শনিবার দেশব্যাপী সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। আগামীকাল রোববার থেকে শুরু হওয়া এই অসহযোগ আন্দোলন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত চলবে।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, শনিবার রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিপুল মানুষ অংশ নিয়েছেন। ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজারো মানুষের সামনে রোববার দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘তাঁকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। তাঁকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’
এপির প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়েছে ‘সরকারের পদত্যাগের দাবির মধ্যে বাংলাদেশে আবারও বিক্ষোভ ও সহিংসতা’। এতে বলা হয়েছে, গত মাসে সংঘাত-সংঘর্ষে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ নিহত হন। এর প্রতিবাদ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আজ (গতকাল) শনিবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়েছে। কিন্তু কোথাও কোথাও সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে হতাহত হয়েছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন জায়গায় সরকার সমর্থকেরাও মিছিল করেছেন।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের জন্য গণভবনে আলোচনার দরজা খোলা বলে ঘোষণা দেন। কিন্তু ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ফেসবুকে এক পোস্টে প্রধানমন্ত্রীর এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
শিক্ষার্থীদের অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার শিক্ষার্থীরা নয় দফা থেকে এক দফা দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এখন তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর প্রশাসনের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রোববার থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে তাঁরা সাধারণ মানুষকে কর ও বিদ্যুৎ-গ্যাস ইত্যাদির বিল না দিতে, অফিস ও কলকারখানা বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রোববার সারা দেশে নিজ দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের জমায়েত করার আহ্বান জানিয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে এপির প্রতিবেদনে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘প্রাণঘাতী ক্র্যাকডাউনের কয়েক সপ্তাহ পর আবারও প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ’। এতে আরও বলা হয়, কারফিউ এবং যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পর থেকেই আগের বিক্ষোভের ভয়াবহ দমনপীড়নের ঘটনায় ক্ষোভের আগুন আরও একবার জ্বলতে শুরু করেছে। এতে বিশেষজ্ঞদের মতামতও যুক্ত করা হয়েছে।
রবিবার প্রকাশ করা প্রতিবেদনটি আগে প্রস্তুত করা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। কারণ, এতে শিক্ষার্থীদের সারা দেশে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচির কথা উল্লেখ নেই। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী নেতাদের গণভবনে আলোচনার জন্য যেতে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটির শিরোনাম করা হয়েছে, ‘নির্মমভাবে বিক্ষোভ দমনের দু-এক সপ্তাহ পর আবারও বিক্ষোভে উত্তাল বাংলাদেশ’।
‘বাংলাদেশে নতুন করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের আহ্বান’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
শনিবারের বিক্ষোভ নিয়ে তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে গত মাসে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভে নিহত দুই শতাধিক মানুষের বিচারের দাবিতে বাংলাদেশে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত ছাত্রনেতারা দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলে শনিবার বড় বিক্ষোভ দেখা দেয়।’
রয়টার্সের প্রতিবেদনের শিরোনাম হলো– ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে বাংলাদেশে হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ।’ গত মাসে চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে বিক্ষোভ চলাকালে সহিংসতায় দেড় শতাধিক মৃত্যুর (সরকারি হিসাবে) জন্য বিচার দাবি করেন আন্দোলনকারীরা।
ভারতের ইকোনমিকস টাইমসের শিরোনাম করা হয়েছে ‘ছাত্র আন্দোলনের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় বাংলাদেশে উত্তেজনা বাড়ছে’।
হিন্দুস্তান টাইমসের শিরোনাম করা হয়েছে ‘হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে বাংলাদেশে বিক্ষোভ জোরদার হচ্ছে’।
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়েছে ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বাংলাদেশ আবার রক্তাক্ত! কুমিল্লায় পড়ুয়াদের মিছিলে গুলি, আহত পাঁচ’।
‘প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশে আবারও বিক্ষোভ ও সহিংসতা শুরু’ শিরোনামে প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। তারা বলছে, গত মাসে বিক্ষোভে ২শ’র বেশি মানুষ নিহত হওয়ার বিচার চেয়ে শনিবার রাজধানী ঢাকায় হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হয়েছেন।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: