বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে ১৫ জুলাই সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে সঙ্ঘাত। এতে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে রড লাঠি হকিস্টিকসহ দেখা যায়। হেলমেট পরিহিত একদল তরুণকেও এ সময় আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা গেছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এ সময় আশপাশের ভবনে অবস্থান নেয়। এ সময় আহত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আহত অবস্থায় মেডিক্যালের দিকে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
হামলার পর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী ওয়াসিফ ইনান গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজাকারের হাত থেকে মুক্ত করতে হবে।
এই হামলার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রড, লাঠি নিয়ে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মিছিল করতে দেখা গেছে।
এর আগে, সোমবার দুপুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্য অপমানজনক। এই বক্তব্য আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ করেছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গত রাতে বিক্ষোভ করে আমরা সোমবার ১২টার প্রধানমন্ত্রীকে তার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলাম। প্রত্যাহার না হওয়ায় আমরা রাস্তায় নেমেছি।’
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, কোটা সংস্কারে সরকারকে দেয়া দাবি না মানা পর্যন্ত তাদের এই আন্দোলন অব্যহত থাকবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে বিবিসি সংবাদদাতা জানান, দুপুর ১২টা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকে।
এই আন্দোলনকে ঘিরে শাহবাগসহ আশপাশের রাস্তায় জলকামানসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নিয়েছে।
উত্তেজনার শুরু যেভাবে
কোটা আন্দোলনকারীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অপমান’ করার প্রতিবাদে একই স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল ছাত্রলীগ।
কোটা আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি শেষে মল চত্বর এলাকার দিকে গেলে বিপরীত দিক থেকে ঢিল ছুড়তে ছুড়তে তাদের ওপর চড়াও হয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিসি সংবাদদাতা জানান, বিকেল ৪টার দিকে আন্দোলনকারীদের ভিসি চত্বর এলাকায় থেকে সরে যেতে দেখা গেছে। এ সময় বেশ কয়েকজনকে রিকশায় করে নেয়া হয় হাসপাতালে।
সংঘর্ষের আগে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা শুরু থেকে অহিংস আন্দোলন করে আসছে। এখন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সহিংসভাবে দমানোর চেষ্টা হলে উদ্ভুত পরিস্থিতির দায় সরকারকে নিতে হবে।
‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন’
দুপুর ১২টার আগ থেকেই এই বিক্ষোভে অংশ নিতে আসতে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বুয়েট, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা কলেজ, বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, ঢাকা নার্সিং কলেজসহ আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
পূর্ব ঘোষণা অনুয়ায়ী সোমবার দুপুর ১২টা থেকে ঢাবির বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্য এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
রাজু ভাস্কর্যের সামনে এদিন শিক্ষার্থীরা ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’সহ নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকে।
রাজু ভাস্কর্যের সামনে এই আন্দোলনে অংশ নেয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মনে আঘাত দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের বাইরে সবাইকে রাজাকার বলেছেন। আমরা তার বক্তব্য প্রত্যাহার ও যৌক্তিকভাবে কোটা সংস্কারের দাবি জানাই।’
ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীদের বাধা
কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে আন্দোলনরত ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভে যাওয়ার সময় ইডেন মহিলা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে ও বাধা দিয়েছে।
তারা বলছেন, ইডেন কলেজে ছাত্রলীগ আন্দোলনকারী ছাত্রীদের ওপর হামলা করেছে। এই হামলায় কয়েক ছাত্রী আহত হয়েছেন বলেও জানান তারা।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ইডেন কলেজে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।
গতকাল রোববার মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। একই সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মিছিল হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও। রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়।
চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন থেকে আসা বক্তব্যের রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর ভেতরে মিছিল শুরু হয়, যা পরে বিক্ষোভে রূপ নেয়।
এক পর্যায়ে বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে এসে টিএসসি এলাকায় জড়ো হতে থাকে।
এক পর্যায়ে ছাত্রী হলগুলো থেকেও ছাত্রীরা বেরিয়ে এসে মিছিল সমাবেশে অংশ নেয়। মিছিল টিএসসি থেকে শাহবাগ এলাকা প্রদক্ষিণ করে। মিছিলকারীদের অনেকে হল থেকে নিয়ে থালা বাসন হাতে নিয়ে স্লোগানের তালে তালে গলা মেলান।
পাশাপাশি হলগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও হলগুলোর গেটে অবস্থান নেয়।
সূত্র : বিবিসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: