ঢাকা-বেইজিং বাণিজ্য : স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহার বাড়াতে জোর

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১২ জুলাই ২০২৪ ০৪:২০

গ্রাফিক্স গ্রাফিক্স

আর্থিক ব্যবস্থায় সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও চীন। দুই দেশ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহার বাড়াতে উৎসাহিত করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির সঙ্গে জুতসই উন্নয়নের পথ বেছে নেওয়ার প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়েছে চীন।

দেশটি একই সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করা, রূপকল্প ২০৪১-এর আওতায় উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়ন এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রচেষ্টার বিষয়েও জোরালো সমর্থন জানিয়েছে।

ঢাকা-বেইজিং বাণিজ্যে স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহার বাড়াতে জোর‘ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারি প্রতিষ্ঠার’ বিষয়ে বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ বিবৃতিতে এ বিষয়টি স্থান পেয়েছে। গত বুধবার বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন দিনের চীন সফর শেষে বেইজিং থেকে এই বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। এটি ১১ জুলাই বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ করা হয়।

যৌথ বিবৃতিতে মোট ২৭টি দফা রয়েছে।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও চীন আন্তর্জাতিক ও বহুপক্ষীয় বিষয়ে সমন্বয় জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। দুই দেশ উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিন্ন স্বার্থ যৌথভাবে রক্ষায় আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, টেকসই উন্নয়ন, মানবাধিকার, মানবিক বিষয়াদি, জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি রূপান্তর ও পরিবেশ সুরক্ষা সম্পর্কিত বহুপক্ষীয় প্রক্রিয়ায় অবস্থান আরো সমন্বয় ও বৃহত্তর ঐকমত্য গড়ে তুলতে উদ্যত অবস্থার বিষয় জানিয়েছে।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সবার জন্য শান্তি, উন্নয়ন ও অভিন্ন সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ‘গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (জিএসআই)’ এবং ‘গ্লোবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভ (জিসিআই)’ বাংলাদেশের পক্ষকে উপস্থাপন করেছে চীন।

যৌথ বিবৃতির শুরুতেই চীনের প্রিমিয়ার লি ছিয়াংয়ের আমন্ত্রণে গত সোমবার থেকে বুধবার শেখ হাসিনার চীন সফরের প্রসঙ্গ রয়েছে। সফরকালে শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং, প্রিমিয়ার লি ছিয়াং এবং চীনা পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্সের জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াং হানিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে উভয় পক্ষ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলো নিয়ে বিশদ মতবিনিময় করেছে এবং ব্যাপক পরিসরে ঐকমত্যে পৌঁছেছে।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সব দিক থেকে চীনকে একটি মহান আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে এবং এর আধুনিকীকরণের পথে সব খাতে চীনা জাতির মহান পুনরুজ্জীবনকে এগিয়ে নিতে তাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, চীন অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেছে এবং ২০২৬ সালে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) স্ট্যাটাস থেকে উত্তরণ এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রগতির প্রতি অব্যাহত সমর্থন ব্যক্ত করেছে।

উভয় পক্ষ ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারির প্রশংসা করে এবং চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে সম্মত হয়।

এ সফরে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন প্রাধান্য পেয়েছে। ‘সাউদার্ন ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের’ আওতায় বাংলাদেশের পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে চীন। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই)’ উদ্যোগের অধীনে এই অঞ্চলের ভারসাম্য এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য চীন বাংলাদেশের পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

যৌথ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, চীনের বিআরআইয়ের অধীনে আরো গুণগত মানসম্পন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

যৌথ বিবৃতিতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২৭৫৮ রেজল্যুশনকে উল্লেখ করে তাইওয়ানকে চীনের অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি ‘এক চীন’ নীতির প্রতি বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ। এ ছাড়া আগামী বছর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হবে। এই উপলক্ষে ভবিষ্যৎ দ্বিপক্ষীয় উন্নয়নে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে।

চীনের সহযোগিতায় বাংলাদেশে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, সিঙ্গল পয়েন্ট মুরিংসহ বিভিন্ন প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া পদ্মা সেতু রেল লিংক, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়ে, রাজশাহী পানি শোধনাগারসহ বিভিন্ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। যৌথ বিবৃতিতে নতুন প্রকল্পের মধ্যে সাবওয়ে, মেট্রো রেল ও সড়ক; তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান; হাসপাতাল এবং পানিসম্পদ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের বিষয়ে চীনের এন্টারপ্রাইজগুলোকে উৎসাহিত করা হয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: