বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে বেতন কাঠামোর ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে (আগের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির) মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত বহালে উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতিবাদে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা। এ পরিপ্রেক্ষিতে আগামীকাল সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করবেন তারা।
শনিবার (৬ জুলাই) বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে জমায়েত হয়ে এখান থেকে সোয়া ৩টায় মিছিল বের করেন।
মিছিলটি হাজী মুহম্মদ মুহসিন হল, ভিসি চত্বর, টিএসসি, জগন্নাথ হলের মোড়, বকশিবাজার, বুয়েট, পলাশী, আজিমপুর, ইডেন কলেজ, নীলক্ষেত ও রাজু ভাস্কর্য হয়ে পৌনে ৫টায় শাহবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে অবস্থান কর্মসূচি শেষে এই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী এই ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আগামীকাল বিকাল তিনটা থেকে 'বাংলা ব্লকেড' কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। শুধু শাহবাগ মোড় নয়, সাইন্সল্যাব, চানখারপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ীসহ ঢাকার প্রতিটি পয়েন্ট অবরোধ করা হবে। এসব পয়েন্টে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা নেমে আসবেন এবং বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি সফল করবেন। আর ঢাকার বাইরে যেসব শিক্ষার্থীরা আছেন আপনারা জেলায় জেলায় মহাসড়কগুলো অবরোধ করবেন।
তিনি বলেন, সরকার মনে করেছে আমরা দুই-তিনদিন রাস্তা অবরোধ করে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে যাব। সরকারের এই ধারণা যে ভুল সেটি আমাদের প্রমাণ করে দিতে হবে। আমরা এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি প্রয়োজনে আমরা হরতাল দিতে বাধ্য হবো।
নাহিদ বলেন, কোর্ট এবং ছাত্রসমাজকে মুখোমুখি করে সরকার কেন দায়িত্বহীন ভূমিকা পালন করছে? নির্বাহী বিভাগ এর দায় এড়াতে পারে না। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী যেখানে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে কোটা থাকবে না, সেই কোটা এখন কেন ফিরে আসলো এর জবাব আমরা চাই।
তিনি আরও বলেন, শুধু প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতেই নয় তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীর চাকরিতেও কোটার বৈষম্য দূর করতে হবে। আমাদের এই আন্দোলন শুধু প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর কোটার জন্য নয়, সকল গ্রেডের কোটা বাতিল করতে হবে। অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনার সন্তানও কিন্তু চাকরি পাবে না যদি কোটা থাকে। আপনাকেও নেমে আসতে হবে। অভিভাবক এবং শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা শাহবাগ এসে আমাদের আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করুন।
ক্লাসে না ফেরার ঘোষণা দিয়ে নাহিদ বলেন, শিক্ষকদের আন্দোলন একদিন বন্ধ হয়ে যাবে কিন্তু আমাদের আন্দোলন বন্ধ হবে না। শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে গেলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরব না
লাইব্রেরি খোলার ব্যাপারে নাহিদ বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনেক আগে থেকেই বলে আসছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি এবং সায়েন্স লাইব্রেরি খুলে দেওয়ার জন্য। আপনারা যদি দ্রুত সেটি খুলে না দিন তাহলে আমরা নিজ দায়িত্বে সেটি খুলে নিব।
কর্মসূচি ঘোষণার আগে বৈষম্যবিরোধী এই ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, এতদিন পুলিশ আমাদেরকে সহযোগিতা করে এসেছে। কিন্তু আজকে পুলিশের একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী আমাদেরকে ভুয়া বলে সম্বোধন করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে আঙুল উঁচিয়ে কথা বলেছে। আমার দিকে তেড়ে এসেছে।
তিনি বলেন, পুলিশের সাথে আমাদের যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে সেটি উপেক্ষা করে সুবিধাবাদী কোন গোষ্ঠী যদি কোন ফায়দা লোটার চেষ্টা করে তাহলে আমরা তাদের হাত গুঁড়িয়ে দিব। আমাদের দিকে যেই পুলিশ আঙুল তুলে তেড়ে এসেছিল সাবধান করে দিচ্ছি সেই আঙুল নামিয়ে ফেলুন। অন্যথায় বাংলার ছাত্র সমাজ এর জবাব দিবে।
হাসনাত বলেন, আজকে আমাদের শাহবাগ ব্লকেড হয়েছে। আগামীকাল থেকে বাংলাদেশ ব্লকেড শুরু হবে। আজকের মতো কালকেও যদি আমাদের বোনেরা আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে যায় কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
আন্দোলনকারীরা বলেন, কোটা বৈষম্য নিরসন এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে চার দফা দাবি জানাই। সেগুলো হলো- ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে; ১৮ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: