বাংলাদেশে ব্যাগেজ রুলে সংশোধন : স্বর্ণ বহনে বাড়ছে ব্যয়

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২৮ মে ২০২৩ ২১:৩২

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি

 

বাংলাদেশে স্বর্ণের অবৈধ প্রবেশ রোধ ও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিতে ব্যাগেজ রুলে বড় ধরনের সংশোধন করতে যাচ্ছে দেশটির জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বাংলাদেশে আসন্ন ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাগেজ রুল সংশোধন করে স্বর্ণবার বহন করার ক্ষেত্রে ভরিপ্রতি শুল্ক দুই হাজার টাকা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশে স্বর্ণের অবৈধ প্রবেশ রোধ ও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ভরিপ্রতি দুই হাজার টাকা শুল্ক দিয়ে ২৩৪ গ্রাম (২০ ভরি) ওজনের স্বর্ণের বার বহন করা যায়। এই শুল্ক বাড়িয়ে ৪০০০ টাকা করা হচ্ছে। আগামী জুলাই থেকে ২০ ভরি স্বর্ণের জন্য ৮০ হাজার টাকা শুল্ক গুণতে হবে, যেখানে বর্তমানে দিতে হয় ৪০ হাজার টাকা। একই সঙ্গে ১১৭ গ্রাম বা ১০ ভরি ওজনের একটির বেশি স্বর্ণের বার বহন করলে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার বিধান আনা হচ্ছে। অবশ্য স্বর্ণালংকার বহনের সুযোগ অপরিবর্তিত রাখা হচ্ছে।

একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে শুল্ক-কর ছাড়াই বাংলাদেশে যাওয়ার সময় ১০০ গ্রাম (সাড়ে ৮ ভরি) ওজনের স্বর্ণালংকার নিতে পারবে। তবে এক ধরনের অলংকার ১২টির বেশি নেয়া যায় না। মূলত ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোকে উৎসাহিত করতে ব্যাগেজ রুলে বড় ধরনের সংশোধন আনা হচ্ছে বলে বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর ঊর্ধ্বতন সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে এনবিআর সূত্র গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে বাংলাদেশে স্বর্ণ নিতে প্রবাসে কর্মরত একটি সংঘবদ্ধ চক্র বা সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার সময় তারা ক্যারিয়ার গ্রুপ হিসেবে সিন্ডিকেটের কাছ থেকে নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে স্বর্ণ বহন করেন। বাড়তি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে ব্যাগেজ রুলের আওতায় স্বর্ণ নিয়ে বাংলাদেশে ফিরতে উৎসাহিত করছে চক্রটি। বিনিময়ে কমিশন ও স্বর্ণের বেশি দাম পাচ্ছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ওই প্রতিবেদনে ব্যাগেজ রুল সংশোধনের সুপারিশ করে বলা হয়, ব্যাগেজ রুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রবাসীরা বৈদেশিক মুদ্রায় রেমিট্যান্স না এনে স্বর্ণ নিয়ে যাওয়ার ফলে অফিশিয়াল চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা কমছে। যে কারণে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ও স্বর্ণের অপ্রয়োজনীয় প্রবেশ রোধে শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ (আমদানি) বিধিমালা, ২০১৬ প্রণয়ন করে। সেই বিধিমালায় স্বর্ণবার ও স্বর্ণালংকার বগন করার ক্ষেত্রে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া আছে।

স্বর্ণবার :

বাংলাদেশে প্রতি ১১.৬৭ গ্রাম স্বর্ণবারের জন্য দুই হাজার টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। ঘোষণা দিয়ে ২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণ বহন করতে পারবে যাত্রী। এর বেশি বহন করলে কাস্টমস তা আটক করবে। ঘোষণা না দিয়ে গ্রিন চ্যানেল অতিক্রমের সময় স্বর্ণবার বহনকারী ধরা পড়লে তা চোরাচালান হিসেবে গণ্য হবে।

স্বর্ণালংকার :

বাংলাদেশে শুল্ক কর পরিশোধ না করে একজন যাত্রী ১০০ গ্রাম পর্যন্ত (এক প্রকারের অলংকার ১২টির বেশি হবে না) শুল্কমুক্ত স্বর্ণালংকার বহন করতে পারবেন। এর বেশি বহন করলে অতিরিক্ত প্রতি গ্রামের জন্য প্রায় দুই হাজার টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। আনা স্বর্ণ বাণিজ্যিক পরিমাণ বলে মনে হলে কাস্টমস তা আটক করবে। আটক করা স্বর্ণালংকার পরে অ্যাডজুডিকেশন প্রক্রিয়ায় শুল্ক-কর এবং অর্থদণ্ড পরিশোধ সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন। আর চোরাচালান বলে মনে হলে কাস্টমস সরাসরি ফৌজদারি মামলা করবে।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: