বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বাড়ছে তিস্তা অববাহিকায়। চাপ সামলাতে লালমনিরহাটের ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে সবকটি জলকপাট খুলে দিয়েছে পাউবো। হু হু করে পানি ঢুকছে অববাহিকার দুইপাড়ের চরাঞ্চল-নিম্নাঞ্চলে।
উত্তরাঞ্চল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেল ৩টায় লালমনিরহাটের ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি রেকর্ড হয়েছে ৫১ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে এই পয়েন্টে সকাল ৬টায় ৫১ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ৫১ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার ও দুপুর ১২টায় ২৮ দশমিক ৪৬ সেন্টিমিটার পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয়। এছাড়াও রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ দশমিক ৬৩ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার দশমিক ১২ সেন্টিমিটার নিচে। এর আগে এই পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় সকাল ৬টায় ২৮ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ২৮ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার, দুপুর ১২টায় ২৮ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার।
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব আরো জানান, উজানের ঢল আর গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তায় পানি বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের ৪৪টি গেটই খুলে রাখা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলের দিকে ডালিয়া পয়েন্টে পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে ভাটির দিকে রংপুর জেলার কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হলে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বাংলাদেশে তিস্তায় নদীর পানি আরো বাড়তে পারে।
এদিকে তিস্তায় পানি বৃদ্ধির কারণে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারী, সদর, নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে। নিমজ্জিত হচ্ছে বাদাম, শাক-সবজিসহ উঠতি বিভিন্ন ফসল।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ তামান্না জানান, এখনো প্লাবন পরিস্থিতি হয়নি। তবুও আমরা সতর্ক অবস্থায় মাঠে আছি। নদীর কিনারে চরাঞ্চলে বসবাসকারী জনগণকে তিনি উঁচু জায়গায় গবাদি পশু ও অন্যান্য সামগ্রী রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বন্যা হলে রেসকিউ করার জন্য বোর্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
রংপুরের ডিসি মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, বন্যা হলে তা মোকাবেলা করতে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনকে প্রস্তুত রেখেছি। সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি আছে আমাদের।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, এখন পর্যন্ত বন্যার আভাস পাওয়া যায়নি। তবে বন্যায় যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে সরকারিভাবে সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেয়া আছে। প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখছেন। যেহেতু তিস্তায় ফ্লাশ ফ্লাড হয়, সেকারণে পানি উঠলেও দ্রুত নেমে যায়। আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছি স্থানীয় প্রশাসনকে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: