জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় অভিযোজন সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। নদীমাতৃক এ দেশের কৃষির উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় পানিসম্পদের যথাযথ ও সুচিন্তিত ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিসীম উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, উপকূলীয় এলাকার পোল্ডারসমূহে ‘এআই’-ভিত্তিক মনিটরিং ব্যবস্থার আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে দুর্যোগ মোকাবিলার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাস উপযোগী পৃথিবী গড়ে তোলা এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা সর্বদা সচেষ্ট রয়েছি।
বাজেট পরিকল্পনায় তিনি বলেন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামোসমূহকে স্বয়ংক্রিয় করার কাজ চলমান রয়েছে এবং উপকূলীয় এলাকার পোল্ডারসমূহে এআইভিত্তিক মনিটরিং ব্যবস্থার আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মেশিন লার্নিং এবং ইন্টারনেট অফ থিংস ৪ বিগ ডাটা ব্যবহারের মাধ্যমে বৃষ্টিপাত ও আন্তঃদেশীয় পানিপ্রবাহের তথ্যাদি সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ পদ্ধতির উন্নয়ন করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।
মাহমুদ আলী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান (বিসিসিএসএপি), বাংলাদেশ ক্লাইমেট ফিসক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক মুজিব ক্লাইমেন্ট প্রোসপারেটি প্ল্যান, বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ইত্যাদি প্রণয়ন করা হয়েছে। সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় নেওয়া প্রকল্পের সুষ্ঠু সমন্বয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ক্লাইমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্যোগ ঝুঁকি কার্যকরভাবে মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় অর্থায়নসংক্রান্ত কৌশল অর্থাৎ ডিসাস্টার রিস্ক ফাইন্যান্সিং স্ট্র্যাটেজি প্রণয়ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের গভীরতা ও ব্যাপ্তি বিবেচনায় জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজনের সক্ষমতা বাড়ানো এবং প্রভাব কমানো-সংক্রান্ত কার্যক্রমকে আরও বেগবান করার লক্ষ্যে এবারের বাজেটে ১০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বায়ুদূষণকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাসের লক্ষ্যে বায়ুদূষণ বিধিমালা ২০২২ প্রণয়ন করা হয়েছে। বায়ুদূষণ মনিটরিং করার জন্য বিভাগীয় এবং শিল্পঘন শহরে স্থাপিত সার্বক্ষণিক বায়ুমান পরিবীক্ষণ কেন্দ্র এবং কম্প্যাক্ট বায়ুমান পরিবীক্ষণ কেন্দ্র এর মাধ্যমে প্রাপ্ত বায়ুমান মনিটরিং উপাত্তসমূহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরাসরি অনলাইনে বিশ্লেষণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং একিউআই হিসেবে ক্যালকুলেশন করে রিয়েল টাইম এয়ার কোয়লিটি সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে।
এ ছাড়াও নদীমাতৃক এ দেশের কৃষির উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় পানি সম্পদের যথাযথ ও সুচিন্তিত ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিসীম। পানি সম্পদের দক্ষ ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদীভাঙন রোধ, নদী ড্রেজিং, সেচ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও ভূমি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে গৃহীত ১৮২টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে গত তিন বছরে ৯২টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: