তদন্ত কর্মকর্তা উত্তম কুমারের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৩০ মে ২০২৪ ১০:৪৯

গ্রাফিক্স গ্রাফিক্স

অর্থ পাচারের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমারের অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থাকায় বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশের আদালত। বর্তমানে বাংলাদেশের র‍্যাব-২–এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (প্রমোট) দায়িত্বে থাকা এই কর্মকর্তাকে আজ বৃহস্পতিবার দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় দুদকের বিশেষ পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জানান।

উত্তম কুমারের দুর্নীতির বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধানকালে দুদকের পক্ষে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক রুহুল হক। আজ আবেদন মঞ্জুর করেন ঢাকার মহানগর সিনিয়র বিশেষ জজ ও মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আস্ সামছ জগলুল হোসেন।

আবেদনে বলা হয়, উত্তম কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়, যা বর্তমানে চলমান আছে। ইতোমধ্যে তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর নামে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।

অনুসন্ধানকালে বিভিন্ন ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া বেশকিছু রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিনি দুদকের নোটিশ পাওয়ার পরেই অসংখ্য হিসাব থেকে সব টাকাপয়সা তুলে হিসাব বন্ধ করছেন, যা সন্দেহজনক বলে প্রতীয়মান হয়। তিনি অনুসন্ধানের শুরু থেকে তেমন কোনো ধরনের সহযোগিতা করেননি, বরং বিভিন্ন সময়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করে অনুসন্ধানকার্য ব্যাহত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন এবং অহেতুক কালক্ষেপণ করছেন।

অনুসন্ধানকালে গোপন সূত্রে জানা যায়, উত্তম কুমার সব হিসাব বন্ধ করে দেশ ত্যাগের পরিকল্পনা করছেন। তিনি বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হওয়ার সমূহ শঙ্কা রয়েছে। এ জন্য তাঁর বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা একান্ত প্রয়োজন।

দুদকের পক্ষে শুনানি করেন মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর। শুনানির সময় আদালত জানতে চান, তিনি (উত্তম) এখনো চাকরিরত কি না। দুদক প্রসিকিউটর জানান, তিনি এখনো চাকরিরত।

ফরিদপুরের আলোচিত এই অর্থ পাচারের মামলায় বরকত ও রুবেলসহ ৪৭ জনের বিরুদ্ধে গত ২১ এপ্রিল চার্জশিট গ্রহণ করেছেন একই আদালত।

এই মামলায় প্রথমে ২০২১ সালের ৩ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন সিআইডির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এএসপি) উত্তম কুমার সাহা ১০ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। কিন্তু মামলায় কিছু অসংগতি পেয়ে আদালত স্বতঃপ্রণোদিতভাবে সিআইডিকে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন।

পরে ৪৭ জনের বিরুদ্ধে নতুন করে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। এটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।

মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের আপন ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর, তাঁর এপিএস সত্যজিৎ মুখার্জি, ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী, শহর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসিবুর রহমান ফারহান, এ এইচ এম ফুয়াদ, ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ওরফে ফাহিম, কামরুল হাসান ডেভিড, মুহাম্মদ আলি মিনার ও তারিকুল ইসলাম ওরফে নাসিম।

সম্পূরক চার্জশিটের নতুন আসামিরা হলেন নিশান মাহমুদ ওরফে শামীম, মো. বিল্লাল হোসেন, মো. সিদ্দিকুর রহমান ওরফে সিদ্দিক, মো. সাইফুল ইসলাম জীবন, অ্যাডভোকেট অনিমেশ রায়, শামসুল আলম চৌধুরী, দীপক কুমার মজুমদার, শেখ মাহতাব আলী, সত্যজিৎ মুখার্জি, মো. শহীদুল ইসলাম ওরফে মজনু, ফকির মো. বেলায়েত হোসেন, গোলাম মো. নাছিম, মো. জামাল আহমেদ ওরফে জামাল, বেলায়েত হোসেন মোল্লা, মো. আফজাল হোসেন খান ওরফে শিপলু, অমিতাব বোস, চৌধুরী মো. হাসান, মো. জাফর ইকবাল ওরফে হারুন মন্ডল, বরকতের স্ত্রী আফরোজা আক্তার পারভীন, রুবেলের স্ত্রী সোহেলী ইমরুজ পুনুম, সাহেব সারোয়ার, আমজাদ হোসেন বাবু, স্বপন কুমার পাল, অ্যাডভোকেট জাহিদ ব্যাপারী, খলিফা জামাল, হাফিজুল হোসেন তপন, রিয়াজ আহমেদ শান্ত, আনোয়ার হোসেন আবু ফকির, মো. মনিরুজ্জামান মামুন, মাহফুজুর রহমান, সুমন সাহা, মো. আব্দুল জলিল শেখ, মো. রফিক মন্ডল, খন্দকার শাহীন আহমেদ ওরফে পান শাহীন, আফজাল হোসেন খান ও সাংবাদিক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান ওরফে দোলন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১০ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ফরিদপুরের এলজিইডি, বিআরটিএ, সড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হন বরকত ও রুবেল। এ ছাড়া তাঁরা মাদক কারবারি এবং ভূমি দখল করে অবৈধ সম্পদ করেছেন। এসি ও নন-এসিসহ ২৩টি বাস, ড্রাম ট্রাক, বোল্ডার ও পাজেরো গাড়ির মালিক হয়েছেন। সেই সঙ্গে দুই হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেন তাঁরা।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রথম জীবনে দুই ভাই রাজবাড়ীর এক বিএনপি নেতার সঙ্গী ছিলেন। তখন তাঁদের সম্পদ বলতে কিছুই ছিল না। ১৯৯৪ সালের ২০ নভেম্বর ওই এলাকায় এক আইনজীবী খুন হন। ওই হত্যা মামলার আসামি ছিলেন বরকত ও রুবেল।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: