বাংলাদেশের বেসরকারি প্রিমিয়ার ব্যাংকের গাফিলতিতে পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ৬৮২ জনের। ব্যাংকটি এসব হজযাত্রীর প্লেনের টিকিট কাটার ১৩ কোটি টাকা আটকে রেখেছে।
এদিকে, ঐ সব হজযাত্রীর টাকা দ্রুত ছাড় করতে প্রিমিয়ার ব্যাংকে ২ দফায় চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ ২৬ মে, রোববার ফের চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মনজুরুল ইসলামের সই করা পৃথক ২টি চিঠি প্রিমিয়ার ব্যাংকের মহাখালী শাখায় পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, শিকদার এয়ার ট্রাভেলস ও মাজিদ ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল হজ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্ধারিত হিসাব নম্বরে হজযাত্রীদের প্রাথমিক নিবন্ধন বাবদ হাজি প্রতি ২ লাখ ৫ হাজার টাকা করে ৪২৮ ও ২৫৪ জনের টাকা জমা রয়েছে।
এ জমা করা টাকা থেকে হাজী প্রতি ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা হিসাবে প্লেনের টিকিট বাবদ মোট ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা ও ৪ কোটি ৯৪ লাখ ৭৯ হাজার ২০০ টাকাসহ মোট ১৩ কোটি ২৭ লাখ লিড হজ এজেন্সি আল রিসান ট্রাভেল এজেন্সি ও নর্থ বেঙ্গল হজ ট্যুরের ব্যাংক হিসাবে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়।
কিন্তু ব্যাংক থেকে ২৬ মে পর্যন্ত এ টাকা লিড এজেন্সির ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়নি। এতে ৬৬২ জন হজযাত্রীর হজে গমন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
হাজিদের প্লেনের টিকিট বাবদ ১৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা স্থানান্তর করার জন্য অনুরোধ করা হলো। টাকা ছাড় করতে ঐ ব্যাংককে এ নিয়ে ২ বার চিঠি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
তারা বলছে, ২ বার চিঠি দিলেও সোমবার পর্যন্ত টিকিটের টাকা ছাড় করেনি ব্যাংকটি। এ কারণে বিপাকে পড়েছেন ঐ সব হজযাত্রী। টিকিট না কাটায় উদ্বেগে দিন কাটছে তাদের।
ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, ঐ হজযাত্রীদের হজ পালনে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়লে এর দায় প্রিমিয়ার ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। গত ৯ মে শুরু হয়েছে এ বছরের হজ ফ্লাইট। হজযাত্রার শেষ ফ্লাইট আগামী ১২ জুন।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মূলত ২টি হজ এজেন্সির গাফিলতিতে ৬৮২ হজযাত্রীর সৌদি আরবে যাওয়া অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
আকবর হজ গ্রুপ নামের একটি এজেন্সি এ বছর ৪২৮ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। পরে সিদ্ধান্ত বদলায়। এজেন্সিটি এ বছর কোনো হজযাত্রী পাঠাচ্ছে না।
এই ৪২৮ হজযাত্রীকে শিকদার এয়ার ট্রাভেলস নামের আরেকটি হজ এজেন্সিতে স্থানান্তর করে আকবর হজ গ্রুপ। এই এজেন্সির মাধ্যমে তাদের হজের প্রাথমিক নিবন্ধন করা হয়েছিল।
হজযাত্রী প্রতি ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা সংগ্রহ করে মোট ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা প্রিমিয়ার ব্যাংকের মহাখালী শাখায় একটি অ্যাকাউন্টে রাখা হয়।
একপর্যায়ে শিকদার এয়ার ট্রাভেলসও এসব হজযাত্রীকে সৌদি আরবে পাঠাবে না বলে জানায়। পরে এই হজযাত্রীদের আল রিসান ট্রাভেল নামের আরেকটি এজেন্সিতে স্থানান্তর করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আল রিসান ট্রাভেল এজেন্সির ব্যাংক হিসাব ইসলামী ব্যাংকের উত্তরা শাখায়। অন্যদিকে এই হজযাত্রীদের প্লেনের ভাড়ার টাকা জমা রয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংকের মহাখালী শাখায়।
প্লেনের টিকিট কাটতে প্রিমিয়ার ব্যাংকে থাকা টাকা ইসলামী ব্যাংকে স্থানান্তরের অনুরোধ জানানো হলেও এ টাকা ছাড় করছে না ব্যাংকটি।
এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম বলেন, এই হাজিদের নিয়ে এজেন্সির জটিলতা ছিল, সেটা সমাধান করা হয়েছে।
যেহেতু টাকাটা হাজিদের, তাই টাকা ব্যাংকের দিতে সমস্যা কোথায়। এখানে ধর্ম মন্ত্রণালয় দায়িত্ব নিয়ে এ টাকা ছাড় করার জন্য চিঠি দিয়েছে। তারপরও ব্যাংকটি টাকা ছাড় করছে না।
তিনি জানান, ব্যাংকের এ গাফিলতির কারণে যদি হাজিদের হজযাত্রায় বিঘ্ন ঘটে বা যেতে না পারে, তার দায়দায়িত্ব এই ব্যাংককে নিতে হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: