টাকার অবমূল্যায়ন: জ্বালানি খাতের সংকট তীব্র হবে

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১২ মে ২০২৪ ১১:৫২

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে দীর্ঘমেয়াদে সংকটে পড়বে দেশের অর্থনীতি। আমদানির খরচ বেড়ে যাবে অনেক গুণ। বিশেষ করে বাড়বে গ্যাস, জ্বালানি তেল ও কয়লার আমদানি খরচ। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বাড়বে। একই সঙ্গে ব্যয় বাড়বে দেশে কাজ করা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিল পরিশোধে।

জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাকার এই অবমূল্যায়নের ফলে জ্বালানি খাত মারাত্মক চাপ ও সংকটে পড়বে। কারণ আমাদের জ্বালানি খাত আমদানিনির্ভর। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যবহারকারীদের ওপর। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক এবং জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘টাকার অবমূল্যায়নের কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সাংঘাতিক চাপে পড়বে। এখন যে শিল্পায়ন হচ্ছে তার ধারাবাহিকতা নাও থাকতে পারে। এ ধরনের অবমূল্যায়ন খারাপ লক্ষণ।’

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত আমদানিনির্ভর। টাকার অবমূল্যায়নে আমদানি বেড়ে যাবে। আসলে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। তবে দীর্ঘমেয়াদি একটা চাপ পড়বে, এটা নিশ্চিত। সামনে হয়তো টাকার অবমূল্যায়ন আরও হবে। রোববার (আজ) থেকে নতুন দরে ডলার কেনাবেচা হবে। এক সপ্তাহ লেনদেনের পর বোঝা যাবে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে বিদ্যুৎ ও জ্বালান খাত নগদ টাকা এবং ডলার সংকটে ভুগছে। অর্থাভাবে জ্বালানি আমদানি মাঝেমধ্যেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এখন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বকেয়া হাজার হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে টাকা ও ডলারের অভাবে এসব বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না সরকার। এ ছাড়া জ্বালানির আমদানি ব্যয় বাড়লে উৎপাদন খরচও বাড়বে। ফলে সমান্তরালভাবে সরবরাহ খরচও বাড়বে। আর সরবরাহ খরচ বাড়লে ভর্তুকিও বাড়বে।

তারা আরও বলছেন, সম্প্রতি আইএমএফের চাপে সরকার বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়েছে। বিদ্যুতে ভর্তুকি কমাতে সরকার নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। ভবিষ্যতে বিদ্যুতের দাম বছরে তিন থেকে চারবার বাড়িয়ে দাম সমন্বয় করার কথা বলছে। তার মানে ভবিষ্যতে বিদ্যুতের দাম আরও বাড়বে। এতে মূল্যস্ফীতি আরেক দফা বৃদ্ধি পাবে।

বিষয়টি স্বীকার করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ডলারের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে বাড়তি চাপ তৈরি হবে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাতে বিল বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ (স্থানীয় খরচ বাদে) এবং জ্বালানির দাম ডলারে পরিশোধ করতে হয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি)। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিলও দিতে হয় ডলারে। মার্কিন মুদ্রার দাম বৃদ্ধিতে এই বকেয়া পরিশোধেই পিডিবির অতিরিক্ত খরচ হবে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া শেভরনের পাওনা এবং এলএনজি আমদানি বাবদ পেট্রোবাংলার বকেয়া প্রায় ৪০ কোটি ডলার। টাকার অবমূল্যায়নে এই বকেয়া পরিশোধে দেশীয় মুদ্রায় সংস্থাটির বাড়তি ব্যয় হবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।

ডলার সংকটে পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) জ্বালানি তেল কেনা বাবদ বকেয়া জমেছে প্রায় ৩২ কোটি ডলার। এর মধ্যে আইটিএফসির ঋণ ২ কোটি টাকা। বাকিটা বিদেশি তেল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর পাওনা। ডলারের মূল্য বাড়ায় এই বকেয়া শোধ করতে বিপিসির অতিরিক্ত ২৫০ কোটি টাকা খরচ হবে।

চলতি বছর বিদ্যুতে ভর্তুকি ধরা হয়েছে ৪৪ হাজার কোটি টাকা। তবে দুদফায় দাম বাড়ানোর ফলে ভর্তুকি প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা কমেছে। অর্থ বিভাগের হিসাবে, ডলারের দাম ১ টাকা বাড়লে বিদ্যুতে ভর্তুকি বাড়ে প্রায় ৪৭৪ কোটি টাকা। ডলারের দাম ৭ টাকা বাড়ায় ভর্তুকি বাড়বে প্রায় ৩ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা। বেসরকারি বিদ্যুৎ উদ্যোক্তারা জানান, ডলার সংকট ও বকেয়ার কারণে ঠিকমতো এলসি খোলা যাচ্ছে না। এখন আবার দাম বাড়ল। ফলে আগের এলসিগুলোতেই ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা লোকসান হবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: