ঢাকাকে বাণিজ্যিক রূপ দিতে গিয়েই খেই হারিয়েছে প্রকৃতি, হাত-পা বাঁধা রাজউকের

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:১৩

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি

ঢাকাকে বাণিজ্যিক রূপ দিতে গিয়েই খেই হারিয়েছে প্রকৃতি। সঙ্গে আধুনিকতার নামে কাঁচের ভবন আর সেন্ট্রাল এসি দিয়ে অপরিকল্পিত নগরায়নের মাশুল দিচ্ছে নগরবাসী। ইমারত বিধিমালার ফাঁকফোকড়ে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। যদিও চলছে আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া। তবে তা যথাযথ বাস্তবায়নেই জোর নগরবিদদের।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা যেন অট্টালিকার ভাগাড় হয়ে দাড়িয়েছে। নিয়ম আছে, কিন্তু মানছে না কেউ। যেমন ইচ্ছা তেমন করে দিনকে দিন নতুন অবয়বে ধরা দিচ্ছে ঢাকা। বাণিজ্যিকতার ছাপ নগরের প্রতিটি ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে। তাই স্কয়ার ফিটের হিসেবে যেন বিলীন হয়েছে এ নগরের সবুজায়ন।

আর অট্টালিকার তৈরির নামে স্বেচ্ছাচারী ইমারত নির্মাণের মাশুল দিচ্ছে ঢাকাবাসী। অপরিকল্পিত নগররায়নে ঠাঁই হচ্ছে কাঁচের ঘর, এসির জঞ্জাল। বিপরীতে বিলীন হচ্ছে প্রকৃতি।

ঢাকায় ৩৭ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এপ্রিল-মে মাসে একেবারে নতুন কিছু নয়। তবে এ দফায় এসে সেটাই যেন হাঁসফাসের প্রধান কারণ নগরবাসীর। দিশেহারা প্রাণ-প্রকৃতি অপেক্ষা একটু স্বস্তির।

বাংলাদেশের নগরবিদরা বলছেন, চাইলেই যেমন ইচ্ছা তেমন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। যত্রতত্র কাঁচের দেয়াল দেয়া হচ্ছে বিল্ডিংয়ে। আর নিয়ন্ত্রণহীন শীততাপ নিয়ন্ত্রণ মেশিনটি আজ অসহনীয়তার প্রধান কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।

ঢাকায় যে পরিমাণ গাছ থাকার কথা ছিল সেটা নেই, তাই জলীয় বাষ্পের মাধ্যমে তাপ কমছে না। বললেন আবহাওয়াবিদ ড.শামীম হাসান ভুঁইয়া

আবহাওয়া অধিদফতরের প্রধান আবহাওয়াবিদ ড.শামীম হাসান ভুঁইয়া বলেন, সূর্য থেকে যে রশ্মি আসে, সেটাকে শটওয়ে রেডিয়েশন বলা হয়। আর যেটা বের হয়ে যায় সেটা লংওয়ে রেডিয়েশন। শটওয়ে রেডিয়েশন গ্লাস ভেদ করে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু লংওয়ে রেডিয়েশন গ্লাস ভেদে আটকা পড়ে বা বাধা গ্রস্ত হয়। যার কারণে কাঁচের ঘরগুলো বেশি উত্তপ্ত হচ্ছে। রাজধানীতে যে পরিমাণ গাছ থাকার কথা ছিল সেটা নেই। গাছ না থাকার কারণে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্পের মাধ্যমে তাপ কমার কথা ছিল, সেটা হচ্ছে না।

এ পরিস্থিতিতে অসহায় রাজউক বলছে, বর্তমান আইনে অনেকটাই হাত-পা বাঁধা তাদের। তাই ইমারত বিধি সংশোধনে হাত দিয়েছে তারা। কঠোর হওয়া হচ্ছে সবুজ বাঁচাতে। নতুন বিধিতে যুক্ত হবে কাঁচের ভবনের ক্ষেত্রেও।

রাজউকের আইন সংশোধনে তা কতখানী কাজে দেবে এ নিয়ে সংশয় নগরবিদদের।

কাঁচের বিল্ডিং বানানো ঠেকাতে আইনগতভাবে কোনো সুযোগ নেই। বললেন রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো.আশরাফুল ইসলাম

রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো.আশরাফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে যেখানে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা রয়েছে, সেখানে কাঁচের বিল্ডিং বানানো ঠেকাতে আইনগতভাবে কোনো সুযোগ নেই। ইমারত নির্মাণ বিধিমালাটি সংশোধিত আইনটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। যুক্তিযুক্ত মতামত সংযুক্ত করে, আশা করছি শিগগিরই সরকার এটাকে গেজেট আকারে প্রকাশ করবে।

নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, দিন শেষে স্বার্থান্বেষী মহলের কাছে কিন্তু রাজউক বলে রাষ্ট্র বন্দি হয়ে গেছে। এখন রাষ্ট্রকে দাঁড়াতে হবে, নগরের বাসযোগ্যতা সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার প্রশ্নে। স্কয়ার ফিটের কাছে যেন রাষ্ট্র বন্দি না হয়। রাষ্ট্রকে অবশ্যই নগর বাঁচাতে হলে, যে ধরনের বিধিমালা সংশোধন করা প্রয়োজন তাই করতে হবে।

রাজধানীর সবুজ বাঁচাতে পরামর্শ যে পরামর্শ দিলেন নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান। প্রায় ৮৫ ভাগ কংক্রিটটে ঢাকাকে ঢাকা গেলেও নগরে স্বস্তি ফেরানো কঠিন, তবে এখনও অসম্ভব নয় বলছেন তারা।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: