বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ায় চীনের নৌঘাঁটি, বাড়ছে উদ্বেগ

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৩ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৩৪

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি

বিশ্ব রাজনীতির ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য কম্বোডিয়া ও বাংলাদেশে চীনের নৌঘাঁটি নির্মাণ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় জন্য হুমকি হতে পারে। দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে এবং আসিয়ান দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব ভেঙে যেতে পারে।

অন্যদিকে, এটিকে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘অশনি সংকেত’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও চীন বাংলাদেশ এবং কম্বোডিয়ায় নৌঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে তার আধিপত্য বিস্তারের কথা অস্বীকার করেছে।

কয়েক বছর ধরেই সামরিক বিশ্লেষকরা এই সন্দেহ পোষণ করছেন। তাদের ধারণা, বেইজিং তার আধিপত্য বিস্তার করতে এবং বিশ্ব পরাশক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে বিশ্বব্যাপী সামরিক ফাঁড়িগুলোর একটি নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা করেছে।

কম্বোডিয়ার রিম নৌঘাঁটি কিছু সময়ের জন্য নজরদারিতে থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রথম সামরিক ঘাঁটি হিসেবে সতর্কতা জারি করেছে। চীন তার প্রভাব বিস্তার না করতে পারে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চাইছে। এদিকে, বেইজিং থাইল্যান্ডের উপসাগরে একটি সামরিক ফাঁড়ি চাইছে।

নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক খুব ধীরগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ঘাঁটিতে দুটি যুদ্ধজাহাজ আনা হয়েছে। এটা এখন ব্যাপকভাবে স্বীকৃত যে, চীনের সেনাবাহিনী কম্বোডিয়ার নৌঘাঁটিতে তাদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, কম্বোডিয়ার কর্মকর্তারা বলেছেন যে, বন্দরটি সংস্কারের জন্য চীন থেকে সহায়তা ব্যবহার করবে। তবে পশ্চিমারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, বেইজিং থাইল্যান্ডের উপসাগরে একটি সামরিক ফাঁড়ি তৈরি করতে চাচ্ছে।

জাকার্তা পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কম্বোডিয়াকে চীনের পছন্দের পেছনে মূল কারণগুলো হলো কম্বোডিয়ায় অগণতান্ত্রিক সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্কের রাজনৈতিক পটভূমি, সেইসঙ্গে চীনা বিনিয়োগ এবং ব্যবসার জন্য উপযুক্ত অর্থনৈতিক পটভূমি। এছাড়া ঐতিহাসিক পটভূমিও চীনের পক্ষে রয়েছে। কারণ, দেশটির ভিয়েতনামের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা রয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বন্দ্বে তারা বেইজিংয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী।

জাকার্তা পোস্ট জানিয়েছে, চীনা হস্তক্ষেপের কারণে কম্বোডিয়া-ভিয়েতনাম সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কম্বোডিয়ার সম্পর্কের অবনতি এবং ভবিষ্যতে আরও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং ওয়াশিংটনের রপ্তানি বিধিনিষেধের কারণে কম্বোডিয়ার অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। যার ফলে কম্বোডিয়ার সম্পদের ওপর চীনা বিনিয়োগকারীদের নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী হবে। দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা আরও বাড়াতে এবং আসিয়ান দেশগুলোর সার্বভৌমত্বকে চূর্ণ করতে কম্বোডিয়ায় বিনিয়োগের ফলে আরও বেশি সংখ্যক ঘাঁটি তৈরি হবে।

এটা বিস্ময়কর কোনো ঘটনা নয় যে, বিশ্বের দুই শক্তিধর দেশ বাংলাদেশ ইস্যুতে জড়িয়ে একে অন্যকে হুমকি দিচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রের এমন একটি অবস্থানে যে, এতে তাদেরকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের কাছেই অত্যাবশ্যকীয় করে তুলেছে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নেই শুধু সহায়তা করছে চীন এমন নয়। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা খাতে চীন সরকারের কাছ থেকে সহায়তা নিচ্ছে বাংলাদেশ। গত দশকে শেখ হাসিনার সরকারকে অস্ত্র, রশদ, সামরিক ট্যাংক এবং যুদ্ধবিমান সরবরাহ দিয়েছে চীন। চীনের কাছ থেকে সাবমেরিন কিনেছে বাংলাদেশ।

এর অর্থ হলো মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশকে তাদের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল হতে কৌশলগতভাবে বাধ্য করছে চীন। এক্ষেত্রে চীনের মূল উদ্দেশ্য হলো ভারতের কাছে বাংলাদেশের নোঙরে পৌঁছা, যাতে তারা নয়া দিল্লির ওপর দৃষ্টি রাখতে পারে। মেগা অবকাঠামো উন্নয়নের নামে চীনের মূল উদ্দেশ্য হলো ইউনান প্রদেশ থেকে বাংলাদেশের বন্দরের সুযোগ পাওয়া, যা ভারতের খুব কাছে।

 

সূত্র: ইউরোএশিয়ান টাইমস, সিএনএন, বিবিসি



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: