বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫৪৪

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১৩ মার্চ ২০২৪ ০৬:৪২

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫৮৩ টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫৪৪ জন ও আহত ৮৬৭ জন। নিহতদের মধ্যে নারী ৭৯ ও শিশু ৮২। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের মাসিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক,৭টি অনলাইন পোর্টাল ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫৮৩ টি দুর্ঘটনার মধ্যে ১৮৭টিই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এতে নিহত হয়েছে ২০৬ জন। যা মোট নিহতের ৩৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

এ ছাড়া সামগ্রিক সড়ক দুর্ঘটনায় ১০৯ জন পথচারী নিহত হয়েছেন। যা মোট নিহতের ২০ দশমিক ০৩ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭৪ জন। এই সময়ে ৪টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত ও ২ জন আহত হয়েছেন। ৩৪টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ২৮ জন নিহত এবং ৬৬ জন আহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক পরিসংখ্যান থেকে দেখা দেখা গেছে—নিহতদের মধ্যে ২০৬ জন বা ৩৭ দশমিক ৮৬ শতাংশই মোটরসাইকেলচালক ও আরোহী। বাসযাত্রী ২৩ জন, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি আরোহী ৪১ জন। প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স আরোহী ১৬ জন। থ্রি-হুইলারের যাত্রী (অটোরিকশা-অটো ভ্যান-ইজিবাইক-মিশুক) ১১১ জন বা ২০ দশমিক ৪০ শতাংশ। স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের (নসিমন-ভটভটি-পাখি ভ্যান-মাহিন্দ্র-চান্দের গাড়ি-ইটভাঙা মেশিন গাড়ি) যাত্রী ২৪ জন এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশা ভ্যান আরোহী ১৪ জন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৭৩টি বা ২৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৩৪টি বা ৪০ দশমিক ১৩ শতাংশ আঞ্চলিক সড়কে, ৯৩টি বা ১৫দশমিক ৯৫ শতাংশ গ্রামীণ সড়কে, ৭২টি বা ১২ দশমিক ৩৪ শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ১১টি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনাগুলোর ৯৭টি বা ১৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২৭৮টি বা ৪৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১১৩টি বা ১৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৮১টি বা ১৩ দশমিক ৮৯ যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৪টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে—ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রামট্রাক-পুলিশভ্যান-বিদ্যুতের খুঁটিবাহী ট্রাক-তেলবাহী ট্যাংকার-সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক-ডাম্পার-এক্সক্যাভেটর-চাষের ট্রাক্টর ৩০ দশমিক ৯৪ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১২ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৪ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (অটোরিকশা-অটো ভ্যান-ইজিবাইক-সিএনজি-মিশুক-লেগুনা) ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-করিমন-ভটভটি-পাখি ভ্যান-টমটম-মাহিন্দ্র-চান্দের গাড়ি-স্টিয়ারিং গাড়ি-ইটভাঙা গাড়ি) ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ ও অজ্ঞাত গাড়ি ২ দশমিক ১৯ শতাংশ।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৮৬৬টি। এর মধ্যে বাস ১০৪ টি, ট্রাক ১৪৮টি, কাভার্ডভ্যান ২২টি, পিকআপ ৩১টি, ট্রাক্টর ২০টি, ট্রলি ১৮টি, লরি ৬টি, ডাম্পট্রাক ১২টি, পুলিশভ্যান ১টি, ডাম্পার ৩টি, বিদ্যুতের খুঁটিবাহী ট্রাক ১টি, তেলবাহী ট্যাংকার ২টি, সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ২টি, চাষের ট্রাক্টর ১টি, এক্সক্যাভেটর ১টি, মাইক্রোবাস ১৭টি, প্রাইভেটকার ২৬টি, অ্যাম্বুলেন্স ৪টি, মোটরসাইকেল ২০৮টি, থ্রি-হুইলার ১৪১টি, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৫৬টি, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ২৩টি ও অজ্ঞাত গাড়ি ১৯ টি।

সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়—দুর্ঘটনাগুলোর ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ ঘটেছে ভোরে, সকালে ২৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ, দুপুরে ১৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ, বিকেলে ১৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ, সন্ধ্যায় ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং রাতে ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণসমূহ—১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ২. বেপরোয়া গতি, ৩. চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, ৪. বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, ৬. তরুণ-যুবাদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, ৭. জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, ৮. দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, ৯. বিআরটিএ-এর সক্ষমতার ঘাটতি ও ১০. গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।

সুপারিশসমূহ— ১. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে, ২. চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে, ৩. বিআরটিএ-এর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, ৪. পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা সার্ভিস রোড তৈরি করতে হবে, ৬. পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে, ৭. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে, ৮. রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমাতে হবে, ৯. টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে, ১০. ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: