মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৩৩০ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পালিয়ে আসা ৩৩০ জনের মধ্যে বর্ডার গার্ড পুলিশও (বিজিপি) ছিলেন বলে জানা যায়। মিয়ানমারে চলমান সংঘর্ষে প্রানভয়ে তারা পালিয়ে আসেন বাংলাদেশে। এ সময় বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত ইউ আং কিউ মুই উপস্থিত ছিলেন।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকালে বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়ন তাঁদের ফেরত পাঠায়।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, চারজন বিজিপি পরিবারের সদস্য, দুই সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চার বেসামরিক নাগরিকসহ সর্বমোট ৩৩০ জনকে সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির কাছে হস্তান্তর করেছে বিজিবি।
মিয়ানমার নাগরিকদের হস্তান্তর কার্যক্রম শেষে বিজিবি মহাপরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও সে দেশের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। সম্প্রতি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এই সংঘর্ষের প্রভাব বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তেও এসে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু, ঘুমধুম ও বাইশফাঁড়ী সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির তুমব্রু রাইট ও লেফট ক্যাম্পে আক্রমণ করে। একই সঙ্গে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী, পালংখালী এবং টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও শাহপরীরদ্বীপ সীমান্তের বিপরীতে কাইচিংরং, মইদু, গুদুছড়া ও মংডু এলাকায়ও গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের বিজিপি, সেনা, পুলিশ, ইমিগ্রেশন ও বেসামরিক সদস্যরা প্রাণভয়ে পালিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে অস্ত্রসহ বিজিবির কাছে আত্মসমর্পণ করে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী সদস্যদের বিজিবি সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্রীকরণ করে এবং তাঁদের নিরাপদ আশ্রয় প্রদান করে। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত ৯ জন বিজিপি সদস্যকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা হয়।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিজিপিসহ ৩৩০ জন সদস্যকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য বিজিবিকে নির্দেশনা দেয়। ফলে বিজিবির রামু সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মেহেদী হোসাইন কবীরের নেতৃত্বে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি হস্তান্তর কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি মিয়ানমারের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ ও সমন্বয় করে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী বিজিপিসহ অন্যান্য সদস্যদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
তিনি বলেন, আজ সকালে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জাহাজে করে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পুলিশ কর্নেল মায়ো থুরা নাউংয়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট বিজিপি প্রতিনিধিদল কক্সবাজারের ইনানীর নৌবাহিনীর জেটিঘাটে আসে এবং বিজিবির কাছ থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী ৩৩০ জন মিয়ানমার নাগরিককে গ্রহণ করে মিয়ানমারে নিয়ে যায়। প্রত্যাবাসন কার্যক্রম অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
বিজিবি মহাপরিচালক আরও বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি সীমান্তবর্তী জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে বদ্ধপরিকর। এই লক্ষ্যে সীমান্তে বিজিবির টহল ও জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থেকে বিজিবি সীমান্ত পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে। বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে বিজিবির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পরিস্থিতি যাই হোক, সীমান্ত দিয়ে আর একজন মিয়ানমার নাগরিককেও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৫টা থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়। সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে ১৬৫ জন ও ৮টা পর্যন্ত অবশিষ্ট ১৬৫ জন ইনানী জেটিতে আগমন করে। তাঁদের ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করে অ্যাম্বাসেডর ও মিয়ানামার থেকে আগত বিজিপির পাঁচ জন সদস্যের কাছে তাঁদের হস্তান্তর করা হয়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: