বাংলাদেশে ডলার-সংকটে বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতিতে নানা সংকট ও বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কমে গেছে বিদেশি বিনিয়োগ ও ঋণের ছাড়। এমন পরিস্থিতিতে গত দেড় বছরে বাংলাদেশে বিদেশি মুদ্রার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ডলার আয় বাড়াতে বিদেশি মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় খাত পোশাক রপ্তানি বাড়ানোতে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ খাতেই বিদেশিদের বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) নিট এফডিআই অস্বাভাবিক হারে কমেছে। বিদায়ী ২০২৩ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে নিট এফডিআই এসেছে ৬৭০ দশমিক ২১ মিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালের একই সময়ে এসেছিল ১ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ৩৯ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। এসব বিদেশি বিনিয়োগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে বস্ত্র খাতে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বস্ত্র খাতে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ১৫৫ দশমিক ৭৭ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে যুক্তরাজ্য। এই সময়ে দেশটির বিনিয়োগ ৪৭ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন ডলার। এরপরই অবস্থান দক্ষিণ কোরিয়ার। দেশটির বিনিয়োগ ৪২ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া শীর্ষ বিনিয়োগকারী দেশের মধ্যে রয়েছে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও শ্রীলঙ্কা। এই খাতে দেশগুলোর মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৬৬২ দশমিক ১৯ মিলিয়ন ডলার।
বিনিয়োগে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা খাত ব্যাংকিং। গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এই খাতে বিনিয়োগ এসেছে ১০৯ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ডলার। খাতটিতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগকারী দেশ যুক্তরাজ্য। দেশটির বিনিয়োগের পরিমাণ ৮৪ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন ডলার। এই খাতে শ্রীলঙ্কা বিনিয়োগ করেছে ১০ দশমিক ১২ মিলিয়ন। যুক্তরাষ্ট্র এই খাতে ৯ দশমিক ৪২ মিলিয়ন ডলার। এই খাতে বর্তমানে মোট বিনিয়োগ রয়েছে ৩৬৪ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন ডলার।
তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের গ্যাস ও জ্বালানি খাত। তিন মাসে এই খাতে বিনিয়োগ এসেছে ৭৭ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন ডলার। এই বিনিয়োগের ৬৫ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন ডলারই বিনিয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তা-ই নয়, জুলাই-সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের সিংহ ভাগই গ্যাস ও জ্বালানি খাতে। এ ছাড়া এই খাতে বিনিয়োগ করেছে নেদারল্যান্ডস ও জাপান। এই খাতে মোট বিদেশি বিনিয়োগ ৩২৫ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন ডলার।
জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বিদেশি বিনিয়োগ আসার দিক থেকে চতুর্থ অবস্থানে খাত টেলিযোগাযোগ। এই খাতে বিনিয়োগ এসেছে ৬৪ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন ডলার। এই খাতে আলোচ্য সময়ে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে নরওয়ে। দেশটি বিনিয়োগ করেছে ৩৮ দশমিক ১১ মিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া এই খাতে বিনিয়োগকারী দেশের মধ্যে রয়েছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও নেদারল্যান্ডস। বর্তমানে এই খাতে মোট বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৩৪ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সবচেয়ে বেশি নিট বিনিয়োগ রয়েছে যুক্তরাজ্যের। দেশটির বিনিয়োগের পরিমাণ ৫৬৫ মিলিয়ন ডলার।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: