বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনা মূল্যে প্রয়োজনের মাত্র ১.৬২ শতাংশ ওষুধ পায় রোগীরা। ৯৬.৪৬ শতাংশই ওষুধ কিনতে হয় বাইরের দোকান থেকে। আর বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, এনজিও ও অন্যান্য সুবিধা থেকে মেলে ২ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ খানা আয় ও ব্যয় জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর উল্লেখিত খানা আয়-ব্যয় জরিপের সময় ছিল ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ জন্য বাংলাদেশের ৭২০টি নমুনা এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। দৈবচয়নের ভিত্তিতে এলাকাপ্রতি ২০টি করে মোট ১৪ হাজার ৪০০ খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন প্রশিক্ষিত কর্মীরা।
জরিপের ফলে দেখা যায়, দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ গ্যাস্ট্রিক, রক্তচাপ, বাতজ্বর, হাঁপানি ও ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগলেও তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি কোনো ধরনের চিকিৎসা নেয় না।
১১ শতাংশ রোগী মনে করে, চিকিৎসা ব্যয় অত্যন্ত বেশি। চিকিৎসা গ্রহণকারীদেরও প্রায় ৫৪ শতাংশ দোকান থেকে নিজের মতো ওষুধ কিনে থাকে। ১৩ শতাংশ নিবন্ধিত চিকিৎসকের কাছে যায় না। ৯ শতাংশ যায় বেসরকারি ক্লিনিকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দুই দশকে স্বাস্থ্য ব্যয়ে সরকারের অংশ ক্রমান্বয়ে কমে ব্যক্তির পকেটের খরচ বেড়েছে। এ কারণে সাশ্রয়ের জন্য বেশির ভাগ মানুষ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই সরাসরি দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, অসুখ হলে মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ প্রথমে সরকারি হাসপাতালে যাচ্ছে। ৬০ শতাংশ মানুষ দোকান থেকে নিজে ওষুধ কিনে খায়। বাকি ২৫ শতাংশ গ্রাম্য চিকিৎসকদের কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে থাকে।
সরকারি হাসপাতালের বিনা মূল্যের ওষুধের সরবরাহ অনেক সময়ই না থাকায় ব্যক্তির নিজের খরচ বেশি হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের তথ্য মতে, চিকিৎসাপ্রার্থীদের ৬৪.৬ শতাংশ অর্থই ব্যয় হয় ওষুধের পেছনে। বাকি ব্যয় হয় রোগ নির্ণয় বা বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, চিকিৎসক দেখানো, হাসপাতালে ভর্তি এবং অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সেবা নেওয়ার পেছনে। ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে স্বাস্থ্য ব্যয়ে সরকারের অংশ ছিল যথাক্রমে ২৮, ২৬ ও ২৩ শতাংশ। অর্থাৎ ওই তিন বছর প্রতিবছর তা কমে এসেছে। বছরগুলোতে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় ছিল যথাক্রমে ৬৪, ৬৬ ও ৬৯ শতাংশ, অর্থাৎ ক্রমেই তা বেড়েছে।
খানা জরিপে বলা হয়, দীর্ঘস্থায়ী বিভিন্ন রোগের মধ্যে সর্বোচ্চ ২১ শতাংশ মানুষ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভোগে। আক্রান্তের সংখ্যায় এর পরের চারটি শীর্ষ রোগের মধ্যে রয়েছে ১৩ শতাংশ রক্তচাপ, ১২ শতাংশ বাতজ্বর, ৮.৪৫ শতাংশ হাঁপানি ও ৮.২৪ শতাংশ ডায়াবেটিস।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ অসংক্রামক রোগের চিকিৎসার জন্য গ্রামাঞ্চলে ৩৪৪টি নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ (এনসিডি) কর্নার চালু করা হয়েছে। সেখানে বিনা মূল্যে বছরে ১০০ কোটি টাকার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানে রোবেদ আমিন বলেন, ‘যে হারে ওষুধের চাহিদা বাড়ছে তাতে ১০০ কোটি টাকার ওষুধে সবাইকে সেবা দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। এ জন্য বরাদ্দ বাড়াতে আমরা সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
পুরো বাংলাদেশে এনসিডি কর্নারে এ পর্যন্ত নিবন্ধিত রোগী তিন লাখের বেশি। ২০২৫ সাল নাগাদ ৩০ লাখ রোগীকে এর আওতায় আনতে চায় স্বাস্থ্য বিভাগ। এ লক্ষ্যে রোগ শনাক্তে জোর দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. আবু হোসেন মো. মইনুল আহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, হাসপাতালগুলো তাদের চাহিদা অনুযায়ী তালিকা দিয়ে থাকে। একেক হাসপাতালের চাহিদা একেক রকম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বাংলাদেশের উপজেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ৪৭ ধরনের ওষুধ বিনা মূল্যে সরবরাহ করে সরকার।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: