ঘূর্ণিঝড় মোখা প্রবল শক্তিতে ধেয়ে আসছে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে। দুপুর ১টার দিকে ১০ নং মহাবিপদ সংকেত জারি করেছে বাংলাদেশের আবহাওয়া দপ্তর। ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের কক্সবাজার বন্দর থেকে এখন ৭ শত ৪৫ কিমি দূরে অবস্থান করছে। এনিয়ে মহা আতঙ্কে আছে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূলের মানুষ। অভিজ্ঞজনের মতে ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের চেয়েও ভয়ঙ্কর হতে পারে ঘূর্ণিঝড় মোখা। এর আঘাতে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে সেন্টমার্টিন থেকে শুরু করে দেশের প্রায় অর্ধেক উপকূলীয় জনপদ। ক্ষয়ক্ষতি কল্পনা করা যাচ্ছেনা।
এটি রোববার সকালের দিকে বাংলাদেশের টেকনাফ- সেন্টমার্টিন ও মিয়ানমারের আরাকান উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
গতরাত থেকে মোখার প্রভাব কক্সবাজার উপকূলে পরিলক্ষিত হচ্ছে। মেঘলা আকাশ, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও হালকা বাতাসে তাপমাত্রা কমেছে। সাগরে পানি বাড়তে শুরু করেছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া দপ্তরের বিজ্ঞপতিতে বলা হয়েছে, উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ এই মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ০৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
এদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন মোখা পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাও, রামু ও কক্সবাজার সদর উপজেলাতে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। উপকূল ও দুর্গত এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য অন্তত ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণক্ষমতা ৫ লাখ ১০ হাজারের মতো। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি কাজ করছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি যেহেতু কক্সবাজারের দিকে আঘাত হানার কথা বলা হচ্ছে, সেহেতু প্রস্তুতিও আগেভাগে নিতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। এখন দুর্গত এলাকার লোকজনকে সরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক যানবাহন ও সরঞ্জাম সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।’
গত রাতে ৮ নং মহা বিপদ সংকেত প্রচারের পরপরই কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকা সমূহে স্থানীয় প্রশাসন মাইকযোগে প্রচারনা শুরু করেছে। এতে বলা হচ্ছে, যানমালের রক্ষায় নিন্মাঞ্চল থেকে লোকজনকে সরিয়ে যেতে এবং পার্শ্চবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দুই দিনের জন্য বন্ধ রয়েছে কক্সবাজার বিমানবন্দরে বিমান উঠানামা। নিন্মাঞ্চল থেকে লোকজন ইতিমধ্যেই সরিয়ে নেয়া শুরু হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিচু এলাকা থেকে ১০ সহস্রাধিক রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। সাগরে মাছ ধরা থেকে কুলে ফিরেছে ৫ সহস্রাধিক ফিশিং বোট।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: