প্রতিদিন আর্দ্রতা কমছে বাতাসে। শুষ্ক-রুক্ষ হয়ে উঠছে আবহাওয়া। প্রকৃতিতে জেঁকে বসছে শীত। শিশির ভেজা ঘাসের ডগায় মুক্তোর দানা। ভোরের কাঁচা রোদ, হিমস্পর্শ প্রাণে শিহরণ তুলে বিদায় নিয়েছে অগ্রহায়ন। ঘন কুয়াশায় মুখ ঢেকে উত্তুরে হিমেল হাওয়ায় প্রকৃতিতে শীতলতা নিয়ে এলো পৌষ মাস।
ঋতুচক্রে পৌষ আর মাঘ মিলে শীতকাল। এই শীতে রিক্ত প্রকৃতিকে বাঙালি নতুন করে আবিষ্কার করে। এক অদ্ভুত আচ্ছন্নতা ঘিরে রাখে। দিনের সূর্য ঢেলে দিচ্ছে মায়াবি রোদ। রাতের আকাশের বুকভরা রূপালি তারাখচিত উজ্জ্বলতা। চাঁদের ধবধবে দুধসাদা জোছনা। কাশবনের শন শন শব্দ আর পাখপাখালির কিচিরমিচিরে জনপদ মুখর।
এদিকে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। দেশের পূর্ব দিকে অগ্রসর হওয়া এই শীতে এখন ক্রমশ প্রায় সারা দেশে শীত জেঁকে বসছে। গত দুই দিন কোনো না কোনো জেলায় ১০ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বাতাসের আর্দ্রতা ৯২%। গতকাল সকাল ৬টায় দেশের উত্তরের জেলা দিনাজপুরসহ অন্তত ১০টি জেলায় তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রিতে নেমে আসে। রাজধানী ঢাকায় গতকাল সকালে তাপমাত্রা ছিল ১৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া বিশ্লেষকগণ জানাচ্ছেন, সপ্তাহ জুড়ে চলবে এই মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ২০ ডিসেম্বরের পর প্রথম দফায় বিদায় নিলেও আবারও ফিরে আসবে শৈত্যপ্রবাহ। তীব্রতা পাবে জানুয়ারিতে। বিশেষ করে গত কিছুদিন ধরে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে কনকনে ঠান্ডায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো এলাকায় সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। কোনো কোনো জেলায় সূর্যের আলো ছড়ালেও উষ্ণতা ছড়াতে না ছড়াতেই ঢেকে যাচ্ছে। অনেক এলাকায় দিনের বেলায়ও যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করতে হচ্ছে। উত্তুরে শিরশিরে হিমেল হাওয়া হুলের মতো বিঁধছে শরীরে। সন্ধ্যা নামতেই হাট-বাজারসহ রাস্তাঘাট হয়ে পড়ছে জনশূন্য। শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্ট করছে অতিদরিদ্র, ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষজন। মানুষের পাশাপাশি কষ্ট করছে গৃহপালিত পশু ও পাখিরাও। ঠান্ডার কারণে বাড়ছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর আউট ডোরে ঠান্ডাজনিত রোগী বাড়তে শুরু করেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, হিমালয়ের পাদদেশ থেকে ঠান্ডা বাতাস উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। কোথাও কোথাও মৃদু ধরনের শৈত্যপ্রবাহ অনুভূত হচ্ছে। তবে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়তে পারে শীতের তীব্রতা। এ সময় সারা দেশে তাপমাত্রা সাড়ে ৭ থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে। এবার এল নিনো সক্রিয় থাকায় চলতি ডিসেম্বর মাসের গড় তাপমাত্রা যেখানে ১৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে, সেখান হয়তো একটু বেশি থাকতে পারে। তিনি বলেন, তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এলে সেটাকে ধরা হয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা কমে ৬ ডিগ্রি থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আর ৪ ডিগ্রি থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে সেটা হয় অতিতীব্র শৈত্যপ্রবাহ।
এদিকে আবহাওযা ও জলবায়ুগবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৃত্রিম ভূউপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে জানান, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে দেশের অভ্যন্তরভাগে অপেক্ষাকৃত হাড় কাঁপানো ঠান্ডা হাওয়া প্রবেশ শুরু করেছে। খুলনা বিভাগের চূয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, রংপুর বিভাগের দিনাজপুর, পঞ্জগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার ওপর দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে সপ্তাহ জুড়ে। এই শৈত্যপ্রবাহ প্রতিদিন অল্প অল্প করে দেশের পূর্ব দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শৈত্যপ্রবাহ আগামী বুধবারের পর দেশের বিভিন্ন বিভাগ অতিক্রম করে ভারতের আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্যের ওপর দিয়ে বাংলাদেশ অতিক্রমের সম্ভাবনা রয়েছে। এই শৈত্যপ্রবাহ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যেতে পারে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: