আট মাসে ঘাটতি ৯৫০ কোটি টাকা

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১১ মে ২০২৩ ১১:৩৮

সংগৃহিত ছবি সংগৃহিত ছবি

বাংলাশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে প্রবাসীদের জন্য চালু করা হয় সঞ্চয় প্রকল্প ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড।

আকর্ষণীয় মুনাফার কারণে প্রবাসীরা এতে বিনিয়োগও করেন। কিন্তু এতে কালোটাকা বিনিয়োগ হচ্ছে এমন অভিযোগের কারণে বিনিয়োগ সীমায় লাগাম টানা হয়। নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করায় এতে বিনিয়োগ কমে যায়।

এর প্রভাবে রেমিট্যান্সেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিক্রি কমে যাওয়ায় অন্য খাত থেকে তহবিল এনে আগের বিনিয়োগের অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে এ বন্ডে ঘাটতি হয়েছে প্রায় ৯৫০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ৫ বছর মেয়াদি ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড বিক্রি করা হয় প্রবাসীদের মধ্যে। এছাড়া বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি খাতে কর্মরতরাও কিনতে পারেন। এতে বছরে মুনাফা দেওয়া হয় ১২ শতাংশ।

গত অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে ৬১৫ কোটি টাকার বন্ড বিক্রি হয়েছিল। ওই সময়ে আগের বিনিয়োগ মূল অর্থ পরিশোধ করা হয়েছিল ৬৫২ কোটি ৮০ লাখ টাকার। ওই সময়ে নিট বিক্রি কমেছিল ৩৭ কোটি ৯০ লাখ টাকার। একই সময়ে বন্ডের বিনিয়োগের বিপরীতে সুদ পরিশোধ বাবদ দেওয়া হয়েছিল ৭০৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

চলতি অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বিক্রি করা হয়েছে ৪৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। মূল অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে ১৪২৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। ঘাটতি হয়েছে ৯৪৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। একই সময়ে সুদ পরিশোধ করা হয়েছে ১ হাজার ১১৬ কোটি ১০ লাখ টাকার।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, আগে মূল অর্থ পরিশোধের চেয়ে বন্ড বিক্রি ছিল বেশি। ফলে মূল অর্থ নতুন বিক্রি থেকেই পরিশোধ করা হতো। এখন বিক্রি কম হওয়ায় অন্য খাত থেকে টাকা এনে মূল অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। সুদ বাবদ অর্থও অন্য খাত থেকে আনতে হচ্ছে। এসব অর্থের বেশিরভাগই আসছে কম সুদের ব্যাংক ঋণ থেকে। অর্থাৎ সরকার কম সুদে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চড়া সুদের বন্ডের দায় শোধ করছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এই বন্ড শুধু বিনিয়োগের উপকরণ হিসাবে বিবেচনা করা ঠিক হবে না। এটি প্রবাসীদের জন্য এক ধরনের প্রণোদনার শামিল। কারণ প্রবাসীরা রেমিট্যান্সের অর্থ এতে বিনিয়োগ করেন। বিনিময় বাড়তি মুনাফা পান। প্রবাসীদের বড় অংশই মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ। ফলে এটি তাদের জন্য এক ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসাবেও কাজ করে।

প্রবাসীদের আগ্রহের কারণে এতে বাংলাদেশের ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছিল। ওই বছরে মূল অর্থ পরিশোধ করা হয়েছিল ৫৫০ কোটি টাকা। সুদ পরিশোধ করা হয়েছিল ১ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিক্রি থেকেই মূল অর্থ ও সুদ পরিশোধ করা হয়েছিল। মাত্র ২২৫ কোটি টাকা অন্য খাত থেকে আনতে হয়েছিল। গত অর্থবছরে বিক্রি হয়েছে ৮৬৬ কোটি টাকা। মূল অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে ১ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। ঘাটতি হয়েছে ৪১৫ কোটি টাকা।

বাংলাদেশের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকার। মূল অর্থ পরিশোধ করা হয় ৩১২ কোটি টাকা। এতে উদ্বৃত্ত ছিল ১ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৩৪১ কোটি টাকার। মূল অর্থ পরিশোধ করা হয়েছিল ১৮৮ কোটি টাকা। উদ্বৃত্ত ছিল ১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, করোনার সময়ে এতে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ হয়েছিল। অনুসন্ধানে সরকার জানতে পারে, এতে প্রবাসীদের চেয়ে বেশি বিনিয়োগ করছে প্রভাবশালী ও ধনাঢ্য একটি গ্রুপ। নানা ধরনের বিধিনিষেধ নিয়েও এটি ঠেকানো যাচ্ছে না। এতে মুনাফার হার বেশি হওয়ায় অনেকেই বিনিয়োগে আগ্রহী। ফলে মেয়াদ শেষে বাংলাদেশ সরকারের দেনা বেড়ে যাচ্ছে। যা সরকারের ওপর সুদের চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলও (আইএমএফ) তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সরকারের আর্থিক দায় কমাতে এতে বিনিয়োগে লাগাম টানার শর্ত আরোপ করেছে। এ কারণে বাংলাদেশ সরকার গত অর্র্থবছরের শুরু থেকে এ খাতে বিনিয়োগে লাগাম টানতে শুরু করে। আগে ক্রয় সীমা ছিল অনির্ধারিত। পরে তা কমিয়ে ১ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এখন ক্রয়ের ঊর্ধ্ব সীমা এক কোটি টাকা। ১ কোটি টাকা অপরিবর্তিত রাখা হলেও বিনিয়োগের মুনাফা কমিয়ে দেওয়া হয়। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মুনাফা ১২ শতাংশ। ১৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ১১ শতাংশ। ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ। ৫০ লাখ টাকার উপরে বিনিয়োগে ৯ শতাংশ মুনাফা দেওয়া হয়। এই বন্ডে বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফার ওপর কোনো কর নেই। অন্য কোনো সঞ্চয়ী উপকরণেও এখন এত বেশি মুনাফা নেই। এখন সর্বোচ্চ মুনাফা ৬ থেকে ৮ শতাংশ। এর মধ্যে মুনাফা থেকে কর দিতে হয়।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: