ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত চত্বর থেকে ছিনতাই করে নেওয়া আনসার আল ইসলামের দুই জঙ্গির সন্ধান গত এক বছরেও পাননি বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের দুজনের একজন ‘অল্পের জন্য হাতছাড়া’ হলেও অপরজনের কোনো খোঁজই এখনো মেলেনি। তবে ছিনতাই হওয়া দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করতে না পারলেও আর যেন কোনো জঙ্গি হেফাজত থেকে পালাতে না পারে, সে জন্য আঁটসাঁট পরিকল্পনা করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।
জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় গত সেপ্টেম্বরে একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদনও প্রকাশ করে বাংলাদেশের পুলিশ সদর দপ্তর। সেখানে ভবিষ্যতে এসব ঘটনা এড়াতে ২০ দফা সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২৮তম সভার কার্যবিবরণীতেও একই বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। সেখানেও জঙ্গি অপরাধীদের বিচারিক কার্যক্রম ভার্চুয়াল আদালতে করার বিষয়ে সুপারিশ করা হয়।
গত বছরের ২০ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালত চত্বর থেকে পুলিশের চোখেমুখে স্প্রে ছিটিয়ে আনসার আল ইসলামের সদস্য মইনুল হাসান শামিম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান (২৪) ও আবু সিদ্দিক সোহেলকে (৩৪) ছিনিয়ে নেন তাঁর সহযোগীরা। এর পর থেকে এ পর্যন্ত জঙ্গিগোষ্ঠীটির অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে ছিনতাই করে নেওয়া ওই দুই জঙ্গি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট বলছে, সম্প্রতি ঢাকার একটি বাসায় অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযানের মাত্র দুই দিন আগে বাসাটি থেকে চলে যান আদালত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গির একজন। আদালত এলাকাতেই প্রায় এক মাস ওই বাসায় অবস্থান করছিলেন তিনি বলে তথ্য পাওয়া যায়।
জানতে চাইলে সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, তাঁরা বাংলাদেশের ভেতরেই অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে তথ্য সংগ্রহ চলছে, নিয়মিত অভিযানও চালানো হচ্ছে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ভবিষ্যতে জঙ্গি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা এড়াতে, জঙ্গিবাদ দমন নিয়ে কাজ করা পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ), কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি), বিশেষ শাখা (এসবি), সিআইডি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি সেল গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়।
তবে পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, প্রায় দেড় মাস ধরে সুপারিশগুলো দপ্তরে দপ্তরে চলে গেলেও এখন পর্যন্ত এগুলোর কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি। তাই এমন ঘটনা পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
অন্যদিকে জঙ্গিদের সশরীরে আদালতে এনে বিচারিক কার্যক্রম না করে ভার্চুয়ালি বিচার করতে মতামত দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিচার বিভাগ এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কারাগার থেকে আদালতে আনা-নেওয়ার পথে জঙ্গি ছিনতাই, পুলিশের ওপর হামলা বন্ধ ও নাশকতা রোধে এটা চালু করা প্রয়োজন। কমিটির ২৮তম সভার কার্যবিবরণীতে জঙ্গি অপরাধীদের বিচারিক কার্যক্রম ভার্চুয়াল আদালতে করার বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। বিষয়টি গত ১৪ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২৯তম সভায়ও আলোচনা হয়।
কারা সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, তাঁরা বিষয়টি শুনলেও এখন পর্যন্ত পুলিশের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি পাননি। ভার্চুয়াল আদালত চালু করার ক্ষেত্রে তাঁদের কোনো এখতিয়ার নেই। কারাগার শুধু পরিবেশটা তৈরি করে দিতে পারে। অন্য একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সেটার কাজ চলছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: