হাসপাতালে ভর্তির একদিনের মধ্যেই শক সিনড্রোমে অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী মারা যাচ্ছে। ডেঙ্গু রোগীদের ৭৪ শতাংশ মৃত্যু হচ্ছে শক সিনড্রোমেই এবং এই মৃত্যুগুলোর জন্য চিকিৎসক অথবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বেশি কিছু করার থাকে না। চিকিৎসা শুরু করতে না করতেই এ ধরনের ডেঙ্গু রোগীরা মারা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতর ৮ থেকে ১৪ অক্টোবরের মৃত্যুর যে বিশ্লেষণ করেছে তাতে দেখা যায় ওই সাত দিনে ৭৯ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫৯ জনেরই মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুর শক সিনড্রোমে এবং এই রোগীরা হাসপাতালে একদিনের কম সময় অবস্থান করতে পেরেছেন। তার মানে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কিছুক্ষণ অথবা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছেন। একই সময়ে যে ৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এদের মধ্যে ৯৩ শতাংশ হাসপাতালে অবস্থানের তিন দিনের মধ্যেই মারা গেছেন। গত সপ্তাহে ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণকারী মাত্র একজন রোগী (১ শতাংশ) হাসপাতালে ১০ দিন অবস্থানের পর মারা গেছেন।
এদিকে চলতি বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত আড়াই লাখ ছাড়িয়েছে। ১০ মাসের কম সময়ে এত অধিক সংখ্যক ডেঙ্গু আক্রান্ত আর কখনো বাংলাদেশে হয়নি। চলতি বছরের গত ১০ মাসের কম সময়ে ডেঙ্গুতে যত মৃত্যু হয়েছে গত ২২ বছরে বাংলাদেশে এত মৃত্যু হয়নি।
বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা: আহমেদ পারভেজ জাবীনবলেন, ডেঙ্গু ভাইরাস বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফল। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা পৃথিবীতেই বেড়েছে গড় তাপমাত্রা। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশেও গত কয়েক বছরে বেড়েছে গড় তাপমাত্রা। বেড়েছে বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ। সাধারণত ২৮ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ডিম থেকে লার্ভা ফুটে বেরুনোর উপযুক্ত। বাংলাদেশে তাপমাত্রা গত জুলাই থেকে চলতি মাস পর্যন্ত ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি উঠে গেছে। কোনো কোনো সময় তাপপ্রবাহ চলেছে। তাছাড়া থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের কারণেও বাংলাদেশে ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার বংশ বৃদ্ধি ঘটেছে। এর বাইরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে যতটুকু কার্যকরভাবে মশক নিধন অভিযান চালানোর প্রয়োজন ছিল তা হয়নি। এ ক্ষেত্রে বলা চলে ঢাকা সিটি করপোরেশন মশক নিধনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
আরো বৈজ্ঞানিক উপায়ে মশক নিধন করতে পারলে বিশেষ করে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ কমিয়ে আনা সম্ভব ছিল।
ডা: আহমেদ পারভেজ জাবীন বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন প্রতিবেশী কলকাতার অভিজ্ঞতাও কাজে লাগাতে পারেনি। একই রকম ভৌগোলিক অবস্থান এবং একই রকম পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও কলকাতা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে কিন্তু ঢাকা সিটি করপোরেশন পারলো না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কনট্রোল রুম জানিয়েছে, গতকাল শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এর পূর্বের ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে আবারো ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৫৫৮ জন। মৃতদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৮ জন এবং ঢাকার বাইরে সারা বাংলাদেশে ৪ জন। ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতালে যারা ভর্তি হয়েছেন তাদের মধ্যে ঢাকার ২০ সরকারি ও ৫৮ বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪২৪ জন এবং ঢাকার বাইরে এক হাজার ১৩৪ জন।
গতকাল ২০ অক্টোবর, শুক্রবার পর্যন্ত চলতি বছর ডেঙ্গুতে মারা গেছেন এক হাজার ২২৬ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখ ৫১ হাজার ১০১ জন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: