ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোকে ‘রাজস্ব ফাঁকির’ অর্থ পরিশোধে নোটিশ

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২ অক্টোবর ২০২৩ ০৪:২৫

বাংলাদেশের ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউয়ের কার্যালয় : সংগৃহীত ছবি বাংলাদেশের ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউয়ের কার্যালয় : সংগৃহীত ছবি


বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তামাক পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি)-এর বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করার মাধ্যমে ২,০৫৪ কোটি টাকার মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ (এনবিআর)। প্রতিবেদন পাওয়ার পর এনবিআর তার লার্জ ট্যাক্সপেয়ার্স ইউনিট (এলটিইউ-ভ্যাট) অফিসকে এই অর্থ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে।

সূত্র জানায়, তথ্য গোপন করে ২০১৬ সালে বিএটিবি মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে এনবিআর।

এই বিষয়ে গঠিত মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর, রাজস্ব কর্তৃপক্ষ গত ২১ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে তার লার্জ ট্যাক্সপেয়ার্স ইউনিটকে (এলটিইউ-ভ্যাট) অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়।

এলটিইউ-ভ্যাট অফিস সূত্র জানিয়েছে, এনবিআরের চিঠি পাওয়ার পর পরই এই অফিস থেকে বিএটিবিকে আলোচ্য অর্থ পরিশোধের চিঠি দেওয়া হয়েছে। এলটিইউ-ভ্যাট অফিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রতিষ্ঠানটির ২০১৬ সালের আলোচ্য রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি সামনে আসে ২০১৮ সালে।

ওই সময় ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটির স্থানীয় ভোগের বিষয়ে এনবিআরে প্রদত্ত তথ্য ও অডিটেড রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্যে গড়মিল দেখতে পান। এর ভিত্তিতে হিসাব করে ২,০৫৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি হয়েছে বলে প্রাথমিক প্রমাণ তাদের হাতে আসে।

এরপর এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তা ও বাইরের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়।

ওই কমিটির রিপোর্ট দেওয়ার পর ২০২১ সালের আগস্টে চূড়ান্ত ডিমান্ড জারি করা হয় আলোচ্য ২,০৫৪ কোটি টাকার দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়নি বলে। অর্থাৎ, এনবিআরের ওই আদেশটি চলে যায় বিএটিবি'র পক্ষে।

এরপর হঠাৎ করেই তিন মাস আগে ইস্যুটি ফের আলোচনায় আসে, যখন এনবিআর ওই ফাইলটি ফের তলব করে।

প্রসঙ্গত, এনবিআরের ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইন অনুযায়ী, ৫৫(৩) সেকশনের আওতায় কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হলে এর দুই বছরের মধ্যে তা যদি ওই ফাইল তলব করা হয়, তাহলে আগের আদেশ বাতিল বলে গণ্য হয়।

এনবিআর ওই ফাইল তলব করার পর তা পরীক্ষা করতে প্রতিষ্ঠানটির মেম্বার ড. মো. শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে ফের একটি কমিটি করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলে।

কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার পর ওই সিদ্ধান্ত জানায় এনবিআর।

কমিটির বরাত দিয়ে ওই নির্দেশে এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়, 'ফাইনাল ডিমান্ড [(সেকশন ৫৫ (৩)] জারি করার ক্ষেত্রে এনবিআরের নির্দেশনা, নিরপেক্ষতা, দক্ষতা ও যথাযথ আইনি পদক্ষেপ, পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ায় ডিমান্ড (যা বিএটিবি'র পক্ষে গেছে) নিষ্পত্তি করা হয়নি।'

এনবিআরের ওই আদেশে বলা হয়, বিএটিবি'র প্রতিনিধিদের চিঠির মাধ্যমে হিয়ারিংয়ে (কমিটির) ডাকা হলে তারা ৩০ দিনের সময় চান। কিন্তু সময় স্বল্পতার কথা উল্লেখ করে তাদেরকে গত ৯ সেপ্টেম্বর হাজির হওয়ার জন্য বলা হলে তারা রাজি হন। ওই তারিখে প্রতিষ্ঠানটির কোনো প্রতিনিধি শুনানিতে হাজির হন নি।

এর দুই দিন পর প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা উচ্চ আদালতে এ বিষয়ে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে এনবিআরের ওই কমিটির প্রধান ড. মো. শদীদুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগযোগ স্থাপনের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।

এদিকে, বিএটিবি'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেহজাদ মুনিমের সঙ্গেও মুঠোফোনে যোগযোগ স্থাপনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানিয়ে তার হোয়াটসঅ্যাপে এসএমএস পাঠিয়ে কমেন্ট চাওয়া হলেও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

অবশ্য ৫৫(৩) এর অধীনে 'চূড়ান্ত দাবি' জারি করার সময়কার এলটিইউ-ভ্যাটের কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরীর সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তিনি টিবিএসকে বলেন, "প্রথমে যে ডিমান্ড করা হয়েছে, তা অকাট্যভাবে প্রমাণ হয় না। এখন যেটি বাতিল করা হচ্ছে, তা গায়ের জোরে।"

তিনি বলেন, "আমি বিশেষজ্ঞ নই। ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)- এর বিশেষজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে ওই আদেশ দেওয়া হয়েছিল।"

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: