বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ইইউ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন (ইওএম) না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে তারা চিঠি পাঠিয়েছে বলে বৃহস্পতিবার স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন।
দ্য ডেইলি স্টার তাদের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলমকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, ‘‘...ইতোমধ্যে তাদের সদর দপ্তর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তাদের যে পূর্ণাঙ্গ একটি মিশন নির্বাচন (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন) পর্যবেক্ষণে পাঠানোর আর্থিক বিষয় ছিল, ডিউ টু বাজেট; এটার কারণে তারা আপাতত নামঞ্জুর করেছেন। আপাতত না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।''
ইসি সচিব এমন বক্তব্য দিলেও বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের নির্বাচনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণের জন্য অনুকূল না থাকায়' নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে চিঠি দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো বিবৃতি এখনও দেয়া হয়নি। এই ব্যাপারে জানতে ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনৈতিক দপ্তর ইইউ এক্সটার্নাল অ্যাকশন (ইইএএস)-এর কাছে মেইল পাঠানো হয়।
যা বলছেন ইইউ মুখপাত্র
ডিডাব্লিউর দেয়া মেইলের উত্তরে ইইএএস-এর পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক মুখপাত্র নাবিলা মাসরালি বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষণ মিশন না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করেন। বাজেট সংকটের কারণে ইইউ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া নির্বাচন অনুসন্ধান মিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে তারা সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ যেসব আন্তর্জাতিক মান মেনে চলার অঙ্গীকার করেছে, তার ভিত্তিতে আসন্ন নির্বাচনে পর্যবেক্ষেণ মিশন পাঠানো কার্যকর, ফলপ্রসূ এবং সমীচীন হবে কিনা, সে বিষয়ে স্বাধীনভাবে সঠিক তথ্য সংগ্রহ এবং কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করার জন্য় ৬ থেকে ২২ জুলাই ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে স্বাধীন নির্বাচন অনুসন্ধান মিশন পাঠায়।''
স্বাধীন এই মিশনে চারজন ‘এক্সটার্নাল' বিশেষজ্ঞ ছিলেন বলে জানান তিনি। তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কর্তৃপক্ষ, বিচার বিভাগ, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ, নিরাপত্তা বাহিনী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের সুপারিশ প্রসঙ্গে নাবিলা বলেন, ‘‘তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে ইইউ-এর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠানোর উদ্দেশ্য এই সময়ে পূরণ হবে না।''
তিনি আরো জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়েছে। তবে বাংলাদেশের সরকার এবং নির্বাচন কমিশন স্বাগত জানালে ইইউ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সহায়তার জন্য অন্য উপযুক্ত বিকল্পের খোঁজ করতে পারে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সাংবাদিকদের বলেছেন, ইইউর পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা নির্বাচন কমিশন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তখন পর্যন্ত কিছু জানায়নি।
তবে তিনি মনে করেন, ‘‘ইইউ প্রতিনিধি দলের আসা বা না আসায় বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে ও নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়বে না। অতীতের নির্বাচনগুলো তাই বলে।''
তবে বাংলাদেশে নির্বাচনে বিএনপি-র অংশগ্রহণ করা বা না করার সিদ্ধান্ত ইইউ-র পর্যবেক্ষক পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রভাব রাখবে বলে জানান তিনি। দ্য ডেইলি স্টার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, ‘‘বিএনপি ও তাদের জোট নির্বাচনে আসবেন কি আসবেন না, এটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক পাঠানোর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি ছিল বলে আমরা জানি।''
সুত্রঃ ডয়েচ ভেলে
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: