বাংলাদেশে জন্মের পরই সবাই পাবে জাতীয় পরিচয়পত্র : সংসদে বিল

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:০৪

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি


বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিতে সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় এনআইডি দিয়ে থাকে ইসি। বিলটি আইনে পরিণত হলে ইসি সে ক্ষমতা হারাবে। এটি সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের অধীনে একটি নিবন্ধকের আওতায় যাবে।

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ৪ সেপ্টেম্বর সোমবার ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিল ২০২৩’ সংসদে উত্থাপন করেন। ২০১০ সালের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন রদ করে নতুন এই আইন করা হচ্ছে। এই আইনের মাধ্যমে জন্মের পরই জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যাবে।

বিলে বলা হয়েছে, বিদ্যমান আইনটি রহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কাছে রক্ষিত এবং নির্বাচন কমিশনের সংগৃহীত জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র-সংক্রান্ত সব তথ্য-উপাত্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন নিবন্ধকের কাছে হস্তান্তরিত হবে।

বিলটি পাস হলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা খর্ব হবে এবং ভোটার তালিকা প্রণয়নে জটিলতা হবে—এমন অভিযোগ করে এর বিরোধিতা করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম।

জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘ভোটার তালিকা করার ক্ষেত্রে এই জাতীয় পরিচয়পত্র আইন কোনো অন্তরায় হবে না। সেখানে নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। আমরা ওইভাবেই নিয়ম-কানুন করব। যখন নাগরিকের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলেই তিনি “ভোটার হয়ে গেছেন” বলে নোটিশ পেয়ে যাবেন। তাঁর নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। এর সবগুলো চিন্তাভাবনা করে সময়োপযোগী করে বিদেশের সঙ্গে তাল মিলিয়েই এটা করেছি। জাতীয় পরিচয়পত্র কার্ডটি সবখানে প্রয়োজন হয়। সে জন্যই আমরা এ কাজটি করতে যাচ্ছি।’

সারা পৃথিবীতে ব্যক্তিগত পরিচয় কার্ড রয়েছে বলে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটি সারা পৃথিবীতে প্রচলিত। আমরা সেই জাতীয় পরিচয়পত্রটি করতে চাচ্ছি।’

বিদ্যমান জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমরা ভোটের সময় একটি ভোটার তালিকা করেছিলাম। আমাদের প্রয়োজনেই ওই ভোটার তালিকা থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো একটি কার্ড দিয়েছিলাম। ১৮ বছরের পর থেকে তা কার্যকর হচ্ছিল। কিন্তু এখন দেশে কোনো শিশু জন্মগ্রহণের দিন থেকেই একটি পরিচয়পত্র নম্বর পাবে। আর মৃত্যুবরণের সঙ্গে নম্বরটির সমাপ্তি ঘটবে। আমাদের উদ্দেশ্য সেটাই।’

পরে বিলটি পরীক্ষা করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

বিলে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মোতাবেক নিবন্ধক প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দেবে। এ জন্য নিবন্ধকের কার্যালয়ের অধীন একটি সেল থাকবে। এই সেলে নির্বাচন কমিশনের এক বা একাধিক কর্মচারী দায়িত্ব পালন করবে। এর ফলে নিবন্ধকের দপ্তর থেকে সরবরাহকৃত তথ্যের ভিত্তিতে ইসি ভোটার তালিকা তৈরি করবে।

বিলে বলা হয়েছে, নিবন্ধন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা, সমন্বয় ও পরিবীক্ষণের জন্য একটি সমন্বয় কমিটি থাকবে। এই কমিটির সভাপতি হবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব। নিবন্ধক হবেন এই কমিটির সদস্যসচিব। নির্বাচন কমিশন ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিরা থাকবেন সদস্য।

বিলে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্য একজন নিবন্ধক থাকবেন। তিনি সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য প্রত্যেক নাগরিককে পরিচয় নিবন্ধন করতে হবে। এ জন্য নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিবন্ধকের কাছে আবেদন করতে হবে। একজন নাগরিককে নিবন্ধক একটি নম্বর দেবেন। সেটা একক পরিচিতি নম্বর (ইউনিক আইডেনটিফিকেশন নম্বর) হিসেবে সবখানে ব্যবহার হবে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণসংবলিত বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাহী বিভাগে অন্তর্ভুক্তির অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে বিদেশে। সেসব উদাহরণের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে সুরক্ষা সেবা বিভাগ ওই দায়িত্ব পালন করবে। এই সেবাটি জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বর্তমান আইনটি সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, সব বয়সের নাগরিকের জন্য জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার লক্ষ্যে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০১০’ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন ও পরিমার্জনের মাধ্যমে হালনাগাদ করে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩’ প্রণয়নের উদ্যোগ সময়োপযোগী। এটি প্রত্যেক নাগরিককে নির্ধারিত শর্তসাপেক্ষে নিবন্ধিত হওয়ার এবং এর ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: