ড. ইউনূসের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ১৭৫ বিশ্বনেতার খোলা চিঠি

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২৯ আগস্ট ২০২৩ ২১:১১

শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ ইউনূস : সংগৃহীত ছবি শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ ইউনূস : সংগৃহীত ছবি


শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করা এবং বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি দিয়েছেন ১৭৫ জন বৈশ্বিক নেতা। নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের এনজিও ‘সিভিক কারেজে’র প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ডেলি হ্যারিস ২৮ আগস্ট, সোমবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস হোর্তা, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন এবং জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনও রয়েছেন বলে বিবৃতিতে জানিয়েছেন স্যাম ডেলি-হ্যারিস।

সোমবার প্রকাশিত সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি তাকে (ড. ইউনূস) লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করায় আমরা উদ্বিগ্ন এবং এটি তাকে বিচারকভাবে হেনস্তা করার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া বলে আমাদের বিশ্বাস।’

এর আগে চলতি বছর মার্চ মাসে প্রথমবারের মতো ড. ইউনূসের 'নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছিলেন ৪০ জন বিশ্বনেতা।  সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে ছাপা হয়েছিল সেই চিঠিটি।

২৭ আগস্ট রোববার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে চিঠি লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তার একদিন পরই আজ ১৭৫ বিশ্বনেতার চিঠি নিয়ে ফের আলোচনায় উঠে এল ড. ইউনূস ও বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন।

 

চিঠির শুরুতে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ সম্বোধন করে লেখা হয়েছে—


’আমরা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, নির্বাচিত কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে আপনাকে এই চিঠি লিখছি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে আপনাদের যে অগ্রগতি, আমরা তার প্রশংসা করি।

যাইহোক, বাংলাদেশে সম্প্রতি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি দেখছি, তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া এবং নির্বাচনকালীন প্রশাসন দেশের সব বড় দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগের ২টি জাতীয় নির্বাচনে গ্রহণযোগ্যতার অভাব ছিল।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানবাধিকারের ওপর হুমকির যে ঘটনাটি আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে তা হলো, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা। আমরা উদ্বিগ্ন যে সম্প্রতি তাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে এবং এটি ধারাবাহিকভাবে বিচারিক হেনস্থা বলে আমরা বিশ্বাস করি। এর আগে তার নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ৪০ জন বিশ্বনেতা আপনার কাছে যে আবেদন জানিয়েছিলেন, তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই চিঠি লেখা হচ্ছে।

আমরা সম্মানের সঙ্গে অনুরোধ করছি, অবিলম্বে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করুন, এরপর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে আপনার দেশের নিরপেক্ষ বিচারকদের একটি প্যানেলে এই অভিযোগ পর্যালোচনা করুন। আমরা নিশ্চিত যে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী এবং শ্রম আইনে যে মামলাগুলো হয়েছে, সেগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা হলে তিনি খালাস পাবেন।

আপনি জানেন যে অধ্যাপক ইউনূসের কাজ—যা আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণামূলক—সামাজিক ব্যবসার হাত ধরে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অগ্রগতির জন্য একটি শক্তি হতে পারে। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশিরা বৈশ্বিক অগ্রগতিতে যে অবদান রেখেছেন, তার একটি প্রধানতম উদাহরণ তিনি। আমরা আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করি, তিনি যেন নিপীড়ন বা হয়রানি মুক্ত হয়ে নিজের কাজ চালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

আমরা আশা করি, আপনি এই আইনি সমস্যাগুলোর সমাধানে একটি নিরপেক্ষ ও ন্যায্য পদ্ধতি নিশ্চিত করবেন, পাশাপাশি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক এবং সব ধরনের মানবাধিকার নিশ্চিত করবেন৷ বিশ্বের লাখো উদ্বিগ্ন নাগরিকের সঙ্গে আমরাও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবো যে সামনের দিনগুলোতে কীভাবে এই বিষয়গুলো সমাধান করা হয়।'

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: