‘স্টেপ ডাউন হাসিনা’ লিখে পোস্ট, চবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২১ আগস্ট ২০২৩ ২১:৪৯

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘স্টেপ ডাউন হাসিনা’ লিখে পোস্ট করায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপাচার্যের কাছ আহবান জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতি। ২০ আগস্ট,রোববার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ও সেক্রেটারি আব্দুল হক স্বাক্ষরিত এই চিঠি উপাচার্য ড. শিরিন আক্তারের কাছে পাঠানো হয়।

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া শিক্ষক মাইদুল ইসলাম শিক্ষা ছুটিতে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের পক্ষ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ‘কটূক্তি’ করার অভিযোগে কারাগারেও গিয়েছিলেন তিনি।

জানা যায়, গত ১৩ই আগস্ট চবি শিক্ষক সমিতির এক জরুরি সভায় মাইদুল ইসলামের বিভিন্ন ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে ব্যাপক আলোচনা iয়। পরে শিক্ষক সমিতির নেতারা মাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপাচার্য বরাবর চিঠি দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন।

উপাচার্য বরাবর পাঠানো শিক্ষক সমিতির সেই চিঠিতে বলা হয়, "সম্প্রতি সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মাইদুল ইসলাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তাঁর ফেইসবুক পেইজে “StepDownHasina" লিখে পোস্ট প্রদানসহ সরকার প্রধান এবং গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে নানান ধরনের কুৎসা রটনা করে যাচ্ছেন। ইতিপূর্বেও জনাব মাইদুল ইসলাম মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নামে বিভিন্ন কুৎসা রটনাসহ আপত্তিকর পোস্ট প্রদান করেন যা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক হিসেবে চরম অসদাচরণের শামিল এবং এ কারণে বিগত ২৩-০২-২০২১ তারিখ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে জনাব মাইদুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ (সংশোধিত আইন, ২০০৯) অনুসারে দায়েরকৃত একটি মামলার সর্বশেষ অবস্থা অবহিত করার অনুরোধ সহকারে উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর পত্র প্রদান করা হয়। এ প্রেক্ষিতে মাননীয় উপাচার্যের পক্ষ থেকে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানার জন্য এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলা সংবিধি অনুযায়ী জনাব মাইদুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর জোর দাবি জানানোর জন্য অদ্যকার সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো।"

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর আবদুল হক বলেন, ‘ সরকারের বিরুদ্ধে গঠনমূলক সমালোচনা যে কেউ করতে পারেন। তবে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে উনার এরকম সরাসরি সরকার পতনের দাবি করা শিষ্টাচার বহির্ভূত এবং আমলে নেয়ার মতো অপরাধ। তাই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপাচার্যের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।

তবে এই বিষয়ে অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম বলেন, "গণ-মানুষের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই। তাই এই প্রতিষ্ঠান যে কোন সরকারের কিংবা একক কোন গোষ্ঠীর অথবা কারো বাপ-দাদার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয়। এই প্রতিষ্ঠান তাই সরকারি কোন দলের খোঁয়াড় নয়। এটি এখন দিবালোকের মত স্পষ্ট যে দেশে আইনের ন্যায্য শাসন নেই, জবাবদিহিতা নেই, জনগণের ভোটাধিকার নেই, তাই গণতন্ত্রও সেখানে অনুপস্থিত। যেহেতু এসব আওয়ামী লীগের ক্ষমতাসীন থাকার সময় ঘটেছে তাই আমি জনগণের ভোটাধিকার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে #StepDownHasina আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে লিখেছি। অনলাইন বা অফলাইন নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারা আমার নাগরিক, রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক অধিকার। "

তিনি আরো বলেন, যে শিক্ষক সমিতি এর আগে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের দ্বারা আমি নিপীড়িত হবার সময় আমার পাশে দাঁড়ায়নি, বারবার যোগাযোগ করার পরও কোন সাড়া দেয়নি আজ তারা আমার সহকর্মী হবার পরও অন্যায়ভাবে আমার বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা নিতে উঠে পড়ে লেগেছে এটি যে আদতে তাঁদের নিজের পায়ে নিজেদেরই শিকল পরানোর বন্দোবস্ত। নিজেরাই নিজেদের কারাগারে বন্দী করে ফেলছে, কিংবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারাগারে রূপান্তরিত করে ফেলা হচ্ছে,এই বোধটুকু তাঁদের ভেতর জাগ্রত হোক। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি মত প্রকাশের অধিকারের প্রাথমিক ধারণা রাখে না বা রাখতে চায় না এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বোধোদয় হোক, শিক্ষক সমিতিগুলোর বোধোদয় হোক।

এদিকে ফেসবুকে মতামত প্রকাশের জেরে একজন সহকর্মীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে কথা বলছেন চবির শিক্ষকসহ অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এটি নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করছেন তারা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক সাইমুম পারভেজ লিখেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছি পাঁচ বছর। মাইদুলের মত অল্প কয়েকজন শিক্ষক বাদে বেশির ভাগই সারাজীবন শিক্ষকতা করেও শিক্ষক হয়ে উঠতে পারেননি, আর পারার সম্ভবনা যে নাই তার ছাপ এসব নোটিশে স্পষ্ট। এই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে আসতে পারাকে আমি আমার জীবনের অন্যতম পেশাগত সাফল্য মনে করি।”

প্রণবেশ চক্রবর্তী নামে একজন লিখেন, "হায়রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি! স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সমিতি ও নেতারা এখন গবেষণা-জ্ঞান চর্চার বিষয় বাদ দিয়ে ফেইসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে চর্চায় ব্যস্ত!"।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: