বাংলাদেশের সম্ভাব্য সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম (সিআইআরটি) গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়। বড় ধরনের সাইবার হামলায় ইসির কর্মকর্তাদের কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডার আক্রান্তের আশঙ্কা থেকে এ টিম গঠন করা হয়েছে। এদিকে ডিভাইস ব্যবহারে সতর্কতার জন্য ১০ আগস্ট, বৃহস্পতিবার নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে ইসির বিশেষজ্ঞ টিম।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সিস্টেম এনালিস্ট আক্তারুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে।
আট সদস্য বিশিষ্ট টিমের অন্য সদস্যরা হলেন— উপ-প্রকল্প পরিচালক (ডাটাবেস) মেজর মো. মামুনুর রশীদ, রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী মোহাম্মদ সোহাগ, প্রোগ্রামার মো. সিরাজুল ইসলাম, নেটওয়ার্ক কনসালট্যান্ট মো. শওকত আকবর মুন্সি, ডাটাবেস কনসালট্যান্ট টিপু সুলতান, সহকারী প্রোগ্রামার নুসরাত জাহান উর্মি এবং সহকারী প্রোগ্রামার আমিনুল ইসলাম। এর কার্যপরিধি হচ্ছে— গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে নির্বাচন কমিশনের জরুরি ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ; সাইবার বা ডিজিটাল হামলা হলে এবং সাইবার বা ডিজিটাল নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; সম্ভাব্য ও আসন্ন সাইবার বা ডিজিটাল হামলা প্রতিরোধের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ; ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকারের অনুমোদন গ্রহণক্রমে সমধর্মী দেশি বা বিদেশি কোনও টিম বা প্রতিষ্ঠানের সাথে তথ্য আদান-প্রদানসহ সার্বিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ; এবং এ সংক্রান্ত বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য কাজ।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি আগস্টে বাংলাদেশে বড় ধরনের সাইবার হামলা হতে পারে এমন একটি তথ্য সম্প্রতি সরকারের তরফ থেকে জানিয়ে ওই হামলায় যাতে ইসির তথ্যভাণ্ডার আক্রান্ত না হয়, সেজন্য ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়। ওই সতর্কবার্তা পাওয়ার পর কয়েক দফা বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। ওইসব বৈঠকে ইসির তথ্যভাণ্ডার কোন কোন মাধ্যমে হ্যাকিং হতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা উঠে আসে। এতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের তথ্যভাণ্ডার থেকে ১৭১টি প্রতিষ্ঠান তথ্য যাচাই করে থাকে। তারা কোনও ধরনের তথ্য ইনপুট দিতে পারে না, ফলে সেখান থেকে ইসির তথ্যভাণ্ডার হ্যাকিংয়ের সুযোগ কম।
অপরদিকে ইসির কম্পিউটার ও ল্যাপটপ যেগুলো সরাসরি তথ্যভান্ডারের সাথে সংযুক্ত এবং এসব ডিভাইস থেকে তথ্য ইনপুট দেওয়া হয়— যার কারণে ম্যালওয়্যার বা ফিশিংয়ের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের এসব ডিভাইস হ্যাকিংয়ের চেষ্টা করতে পারে হ্যাকাররা। এতে কম্পিউটার বা ল্যাপটপের সংযোগে থাকা ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রায় ১১ কোটি ৯২ লাখ ভোটারের তথ্যভাণ্ডারে প্রবেশের সুযোগ পাবে হ্যাকাররা। এ শঙ্কা থেকে ইসির তথ্যভাণ্ডার ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করার জন্য এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম হুমায়ুন কবীর কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সাইবার হামলায় ঝুঁকি থেকে এড়াতে আমাদের এ টিম কাজ করবে। এছাড়া আমরা সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সচেতন করতে অবহিতকরণ সভার ব্যবস্থা করছি।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে দাফতরিক কম্পিউটারসহ ব্যক্তিগত কম্পিউটার বা মোবাইলের মাধ্যমে নিরাপদ ইন্টারনেট সেবা গ্রহণের মাধ্যমে সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিতকরণের বিষয়ে বিভিন্ন সর্তকতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে বৃহস্পতিবার সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ইসির রাজস্ব খাতভুক্ত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এবং সাড়ে ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত প্রকল্প ও আউটসোর্সিং-এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে নিয়ে ব্যবস্থা সচেতনতামূলক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: