জ্বালানি খাতে দক্ষতা বৃদ্ধি ও উন্নয়নে সহায়তা করতে বাংলাদেশকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এর মধ্যে রয়েছে আবাসিক ও শিল্প গ্রাহকদের জন্য প্রি-পেইড মিটারিং সিস্টেমের মাধ্যমে গ্যাস বিতরণ, চূড়ান্ত ব্যবহারে দক্ষতা উন্নত করতে এবং মিথেনের নির্গমন কমানো। গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কে প্রাকৃতিক গ্যাস লিকেজ ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা করবে ‘দ্য গ্যাস সেক্টর এফিসিয়েন্সি ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড কার্বন অ্যাবেটমেন্ট প্রজেক্ট’। পাশাপাশি এই প্রকল্প আবাসিক ও শিল্প-কারখানায় ব্যবহারকারীদের ব্যবহারে অপচয় হ্রাস করবে এবং পুরো নেটওয়ার্ক পর্যবেক্ষণের সক্ষমতা জোরদার করবে।
২৮ জুলাই, শুক্রবার বিশ্বব্যাপী ঋণ প্রদানকারী সংস্থাটি জানিয়েছে, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে ১২ লাখের বেশি প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন করা হবে।
এর মধ্যে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ৫৪ শতাংশ আবাসিক গ্রাহকের জন্য বৃহত্তর ঢাকায় ১১ লাখ প্রিপেইড মিটার এবং পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (পিজিসিএল) সমগ্র আবাসিক গ্রাহক যারা রাজশাহী বিভাগে রয়েছে তাদের ১ লাখ ২৮ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হবে।
এটি শিল্প খাতে গ্যাসের ব্যবহার আরও ভালোভাবে নিরীক্ষণ ও পরিচালনা করার জন্য স্মার্ট মিটারের কার্যকারিতা প্রদর্শনের লক্ষ্যে বৃহত্তর শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের কাছে প্রায় ৫০টি স্মার্ট মিটার চালু করবে।
প্রকল্পটি গ্যাস প্রবাহ পর্যবেক্ষণ উন্নত করতে ও মিথেনের নির্গমন কমাতে সহায়তা করার জন্য পিজিসিএল নেটওয়ার্কে একটি সুপারভাইজরি কন্ট্রোল অ্যান্ড ডেটা অ্যাকুইজিশন (এসসিএডিএ) এবং জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম চালু করবে। যা মিথেন লিক শনাক্ত করতে ও মেরামতের জন্য গ্যাস নেটওয়ার্কে আরও ভালো পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসে অবদান রাখবে।
বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাসে ২০২১ সালের ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন্স (এনডিসি) অর্জনে বাংলাদেশের জন্য জ্বালানি দক্ষতা উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পটি পরিবার ও শিল্পক্ষেত্রে প্রাকৃতিক গ্যাসের অপচয় হ্রাস ও গ্যাস পাইপলাইনগুলোতে মিথেন নির্গমন হ্রাস করতে সহায়তা করবে, যা প্রায়ই গ্যাস উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সঞ্চালন ও বিতরণ থেকে লিকের কারণে ঘটে।’
২০২১ সালে দেশের প্রাথমিক জ্বালানি ব্যবহারের ৬৮ শতাংশ ছিল প্রাকৃতিক গ্যাস।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র এনার্জি স্পেশালিস্ট ও প্রকল্পের টিম লিডার সামেহ আই মোবারেক বলেন, বাংলাদেশের গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের সবচেয়ে বড় উৎস তেল ও গ্যাস খাত থেকে।
তিনি আরও বলেন, প্রিপেইড গ্যাস মিটার এবং উন্নত মনিটরিং সিস্টেমগুলো প্রাকৃতিক গ্যাসের চূড়ান্ত ব্যবহারকে কমাতে, মিথেন লিকেজ হ্রাস করতে এবং পরিবার এবং শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের জন্য কম গ্যাস বিলের দিকে পরিচালিত করতে সহায়তা করবে।
প্রকল্পটি প্রাকৃতিক গ্যাসের ভেল্যু চেইনে কার্বন ডাই অক্সাইড ও মিথেন নির্গমন উৎসগুলো শনাক্ত করতে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে এবং বিদ্যমান সুবিধা ও অবকাঠামোতে নির্গমন হ্রাস করার সুযোগ শনাক্তে অগ্রাধিকার দেবে।
এটি জ্বালানি ভেল্যু চেইনে টেকসই কার্বন হ্রাসের জন্য নির্গমন পর্যবেক্ষণ, রিপোর্টিং ও যাচাইকরণ (এমআরভি) প্রোটোকল এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামো বিকাশে সহায়তা করবে যা এরপরে সরকারি ও বেসরকারি জলবায়ু অর্থায়নের সঙ্গে বিনিয়োগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে সহায়তাকারী প্রথম উন্নয়ন অংশীদারদের মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের সঙ্গে ৫০ বছরের অংশীদারিত্বে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান, সুদমুক্ত ও রেয়াতি ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বর্তমানে ৫৩টি চলমান প্রকল্পে ১৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে বাংলাদেশে বিশ্বের বৃহত্তম ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) প্রোগ্রাম রয়েছে।
সূত্র : ইউএনবি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: