ডিবি পুলিশ পরিচয়ে একের পর এক ডাকাতি

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১৬ জুলাই ২০২৩ ১০:২৪

বরখাস্তকৃত পুলিশ-সেনা সদস্যের ডাকাত দলের সদস্যরা : সংগৃহীত ছবি বরখাস্তকৃত পুলিশ-সেনা সদস্যের ডাকাত দলের সদস্যরা : সংগৃহীত ছবি


বরখাস্তকৃত বাংলাদেশ পুলিশ ও সেনা সদস্য মিলে তৈরি করেছে ডাকাত দল। যাদের মূল টার্গেট ব্যাংক এবং মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তির কাছ থেকে তা ছিনিয়ে নেয়া। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি প্রধান) হারুন অর রশীদ।

ডিবি প্রধান বলেন, বড় অংকের টাকা উত্তোলনকারী অথবা জমাদানকারীদের শনাক্ত করতে তাদের রয়েছে প্রশিক্ষিত সদস্য। সিগন্যাল পেলেই একটি দল টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে তুলে নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর পরিচয়ে। পল্টন থেকে এক ব্যবসায়ীর এক কোটি বারো লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় ছয় জনকে গ্রেফতারের পর গোয়েন্দা পুলিশ, ভুয়া ডিবির এ ডাকাত দলটি সম্পর্কে পেয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

গত ৬ জুলাই, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা। রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় কাঁধে ব্যাগ বহনকারী দুই ব্যক্তির তৃতীয় ব্যক্তির সঙ্গে কথোপকথন হয়। সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে থেকে মোবাইল ফোনে দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে দেখা যায় আরেকজনকে। মিনিট চারেক পর একটি রিকশায় ওঠেন ব্যাগ বহনকারী দুই ব্যক্তি। মোবাইল ফোনে কথা বলা ওই ব্যক্তিটিও ওঠেন তবে আলাদা রিকশায়। তাকে অনুসরণ করতে থাকে আগের রিকশাটি। পাঁচ-ছয় মিনিট পর চারজন গতিরোধ করেন রিকশাটির। টেনে হিঁচড়ে ব্যাগ বহনকারী দুজনকে রিকশা থেকে নামিয়ে তোলা হয় একটি সাদা রংয়ের মাইক্রোতে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে উঠে এসেছে তাদের ডাকাতির এ দৃশ্য।

ভুক্তভোগীরা জানান, গাড়িতে ওঠানোর পর তাদের হাত-পা বেঁধে ব্যাগে থাকা ১ কোটি ১২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে একজনকে কেরাণীগঞ্জে আকেজনকে মুন্সীগঞ্জে ফেলে রেখে পালিয়ে যান।

ডাকাত দলের হাতে পড়া এক ভুক্তভোগী জানান, রিকশার উঠার ৫ থেকে ৬ মিনিটের মধ্যেই আমরা ছিনতাই বা ডাকাতির কবলে পড়ি। একটি সাদা রংয়ের গাড়ি সামনে থেকে এসে আমাদের ‍রিকশা থামিয়ে গাড়িতে উঠে নিয়ে যায়।

আরেকজন বলেন, সামনে থেকে একটি গাড়ি এসে রিকশা থামিয়ে আমাদের তুলে নেয়। আমাদের তুলে নেয়ার পর টাকার ব্যাগ, মানিব্যাগ এবং ফোন নিয়ে নেয়। আমার সাথের জনকে ফেলে দিয়ে যায় কেরাণীগঞ্জে। পরে তার কাছ থেকে শুনেছি। আর আমাকে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে চোঁখ বেঁধে ফেলে রেখে যায়।

নিজেদেরকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দেয়া ডাকাত দলটির ছয় সদস্যকে রাজধানীর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ছিলো নয়জন। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে মাত্র ৭ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। বাকি টাকা পলাতক তিন ডাকাতের কাছে রয়েছে বলে গেছে। এই সাত লাখ টাকা দুই ডাকাত পলিথিনে মুড়িয়ে পুঁতে রেখেছিলো বাড়ির আঙিনায় বলে জানিয়েছেন ডিবি প্রধান।

ডিবি প্রধান আরও বলেন, মেহেদী হাসান আব্বাস (বরখাস্ত পুলিশ সদস্য) তার বিরুদ্ধে ৫টি মামলা আগে থেকেই রয়েছে, গোলাম রাসেল সোহাগ তার নামে ৩টা মামলা রয়েছে। আরেকজন আছেন ওবায়দুর রহমান ফারুক (সেনা সদস্য) তার নামে ১০টি মামলা রয়েছে। মূলত বরখাস্তকৃত পুলিশ ও সেনা সদস্য মিলে এ চক্রটি গড়ে তুলেছে তারা। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

তিনি আরও বলেন, তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে ডাকাতি ছিনতাইয়ের ঘটনায় যত চক্র এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে প্রতিটিতেই পাওয়া গেছে কোনো না কোনো বরখাস্তকৃত পুলিশ অথবা অন্য বাহিনীর সদস্য।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: