বাংলাদেশে পণ্যখাতে চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬২ বিলিয়ন ডলার। এর পাশাপাশি সেবাখাতের ১০ বিলিয়ন ডলার মিলিয়ে মোট ৭২ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের আশা করছে বাংলাদেশ সরকার। ১২ জুলাই, বুধবার দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকের এ তথ্য জানান বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
তিনি বলেন, সদ্যবিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬.৬৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পণ্য খাতে ৬২ বিলিয়ন ডলার এবং সেবা খাতে ১০ বিলিয়ন ডলার মিলে ৭২ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।
সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে (২০২২-২৩) ৫৮ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে ৫ হাজার ৫৫৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করা সম্ভব হয়েছিল। সে হিসেবে ৬.৬৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আড়াই বিলিয়ন ডলার পিছিয়ে ছিল রফতানি আয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষ তো আশা নিয়ে বাঁচে। বৈশ্বিক প্রতিকূলতার পরও ভালো ফলাফল এসেছে। গতবছর কিন্তু গ্যাসের সমস্যা হয়েছে। গ্যাসের দাম বেড়েছে। এমন সমস্যার পরও এ খাতে ভালো অর্জন হয়েছে। গতবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা না গেলেও তার আগের অর্থবছরের চেয়ে বেশি রফতানি আয় এসেছে।
এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, গেল অর্থবছরে পণ্য রফতানি করে ৫৫.৫৬ বিলিয়ন ডলার অর্জিত হয়েছে। যা আগের বছরের চেয়ে ৬.৭ শতাংশ বেশি। পণ্যভিত্তিক দেখলে দেখা যায়, তৈরি পোশাকে প্রায় ১০ ভাগ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর মধ্যে নিট পণ্যে একটু বেশি হয়েছে।
কিন্তু চামড়াসহ অন্যান্য খাতে কিছু ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হওয়ায় সব মিলিয়ে এ প্রবৃদ্ধি হয়েছে উল্লেখ করে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের বৈশ্বিক রফতানির গন্তব্য লক্ষ্য করি, তাহলে দেখা যাবে, আমেরিকা এবং ইউরোপের মূল্যস্ফীতিসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের পণ্যের চাহিদা সেখানে কমেছে।’
তিনি বলেন, ‘নভেম্বর থেকে হয়তো বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। ফলে কখন বিশ্বব্যাপী আমাদের পণ্যের চাহিদা হয়তো বাড়বে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। আমরা দেখেছি, আমেরিকা ও জার্মানিতে চাহিদা কমলেও অন্যান্য দেশে আমাদের প্রবৃদ্ধি ভালো। যেমন - অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ায় অনেক ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আমাদের সবচেয়ে বড় রফতানি গন্তব্য ভারত। এর পরেই রয়েছে যথাক্রমে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়া। আমরা গন্তব্য বহুমুখী করার কথা বলতাম। এখন সেটির প্রতিফল দেখা যাচ্ছে। কিন্তু পণ্যের বহুমুখীকরণের কথা বলা হলেও সেটি আদৌ হয়নি।’
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুসারে, সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে পোশাক খাতে ৪৬.৮০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪৬.৯৯ মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে; যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার বেশি। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে রফতানি আয় হয়েছিল ৪২.৬১ বিলিয়ন ডলার।
এবারও নিটওয়্যার পণ্য রফতানি রেকর্ড ছাড়িয়েছে। মোট রফতানি আয়ের মধ্যে ২৫.৭৩ বিলিয়ন ডলার ছিল নিটওয়্যার পণ্য, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২৩.২১ বিলিয়ন ডলার। বাকি ২১.২৬ বিলিয়ন ডলার ওভেন পণ্য রফতানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছর ছিল ১৯.৩৯ বিলিয়ন ডলার।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: