ছবি : সংগৃহীত
দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ পর দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে তাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের নিয়মিত বাণিজ্যিক ফ্লাইট বিজি-২০২ (বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৭ বছর পর তিনি বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন।
এর আগে, বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ১০টার দিকে তিনি লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছান। যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মীরা নিরাপত্তা বেষ্টনী পর্যন্ত তাকে বিদায় জানান। রাত সোয়া ১২টার দিকে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। একই ফ্লাইটে বিএনপির প্রায় ৫০ জন নেতাকর্মী বাংলাদেশে ফেরেন।
ফ্লাইটটি বাংরাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি দেয়। সেখানে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো ধরনের সংবর্ধনা আয়োজন করা হয়নি। প্রায় এক ঘণ্টা বিরতির পর সকাল ১১টা ১৩ মিনিটে বিমানটি ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে।
ঢাকায় পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে বিএনপির সিনিয়র নেতা এবং দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তারেক রহমানকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ সময় তার শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুও তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন।
এরপর ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে পূর্বনির্ধারিত বুলেটপ্রুফ বাসে চড়ে তিনি রাজধানীর পূর্বাচল রুটের ৩০০ ফিট সড়কে আয়োজিত বিশাল গণসংবর্ধনার উদ্দেশে রওনা হন। সকাল থেকেই ভোরের তীব্র শীত উপেক্ষা করে পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। কুড়িল থেকে শুরু করে সংবর্ধনা মঞ্চ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে হাজার হাজার নেতাকর্মীর ঢল নামে। স্লোগান, প্ল্যাকার্ড আর উচ্ছ্বাসে পুরো এলাকা পরিণত হয় এক বিশাল উৎসবকেন্দ্রে। নেতাকর্মীদের মুখে মুখে ছিল একটাই স্লোগান—‘লিডার আসছে’।
গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগঘন কণ্ঠে তারেক রহমান বলেন, “প্রিয় ভাই-বোনেরা, সন্তান হিসেবে আমার মন আমার মায়ের বিছানার পাশে পড়ে আছে, সেই হাসপাতালের ঘরে। কিন্তু সেই মানুষটি যাদের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন—অর্থাৎ আপনারা—এই মানুষগুলোকে আমি কোনোভাবেই ফেলে যেতে পারি না। তাই হাসপাতালে যাওয়ার আগে আপনাদের প্রতি এবং সারা দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেই আজ এখানে দাঁড়িয়েছি।”
গণসংবর্ধনা শেষে তিনি সরাসরি রাজধানীর বসুন্ধরায় অবস্থিত এভারকেয়ার হাসপাতালে যান, যেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তার মা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে তাকে বহনকারী বাস হাসপাতালের সামনে পৌঁছালে তিনি বাস থেকে নেমে হেঁটে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় তার সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতারা ছিলেন। তারেক রহমান হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই সেখানে যান তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান।
মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে রাত সাড়ে ৭টার দিকে তারেক রহমান এভারকেয়ার হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এরপর তিনি গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাসভবনের উদ্দেশে রওনা দেন, যেখানে তিনি অবস্থান করবেন বলে জানা গেছে।
তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে দিনভর রাজধানীসহ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: