11/19/2025 ইসির খসড়া আচরণবিধি নিয়ে প্রশ্ন তুলল জামায়াত
মুনা নিউজ ডেস্ক
১৯ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:৪৩
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত সংলাপে খসড়া আচরণবিধি নিয়ে একাধিক আপত্তি তুলেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বুধবার অনুষ্ঠিত সংলাপে দলটির প্রতিনিধিরা পোস্টার ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা, শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা এবং অভিযোগ নিষ্পত্তির সময়সীমা নির্ধারণ না থাকা— এসব বিষয়কে প্রধান অসঙ্গতি হিসেবে উল্লেখ করেন।
সংলাপে অংশ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও জামায়াতের প্রতিনিধি শেখ শিসির মনির বলেন, আচরণবিধির খসড়ায় দ্বৈত নীতি রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, ৭(ক) ধারায় সব ধরনের পোস্টার নিষিদ্ধ করা হলেও ৭(ঘ) ধারায় পোস্টার ও অন্যান্য প্রচার সামগ্রী অপসারণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এক ধারায় পোস্টার নিষিদ্ধ, আবার অন্য ধারায় পোস্টার নামানোর নির্দেশ— বিষয়টি পরস্পরবিরোধী।”
এছাড়া আচরণবিধি লঙ্ঘনে ছয় মাসের জেল বা এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান থাকলেও কারা এই শাস্তি দেবেন— তা স্পষ্ট নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার ভাষায়, “শাস্তি কারা দিবে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা উচিত ছিল।” তিনি আরও বলেন, অন্য কারও অপরাধের দায় রাজনৈতিক দলের উপর চাপানোও অযৌক্তিক।
অভিযোগ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ২৬ ধারা অনুযায়ী সময়সীমা বাধ্যতামূলক না থাকাকে আরেকটি বড় ত্রুটি হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। শিসির মনির বলেন, “সময়সীমা না থাকলে অভিযোগ নিষ্পত্তি ঝুলে থাকতে পারে।”
তিনি প্রস্তাব করেন, সব প্রার্থীকে যৌথভাবে ইশতেহার পাঠ ও আচরণবিধি মানার অঙ্গীকার করার যে ধারাটি বর্তমানে ঐচ্ছিক, তা বাধ্যতামূলক করা উচিত— এতে রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নতি হবে।
সেনা মোতায়েন, পোস্টার, লাউডস্পিকারসহ আরও দাবি
সংলাপে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার দাবি করেন, প্রতিটি কেন্দ্রে ৩–৫ জন সেনা সদস্য মোতায়েন করা উচিত। তিনি বলেন, একজন সেনা সদস্য দিয়ে সহিংসতা বা কেন্দ্র দখল ঠেকানো সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, প্রবাসীদের গণভোটে ভোট দেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। এনআইডি সংক্রান্ত জটিলতায় থাকা ব্যক্তিদের পাসপোর্ট দিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
এছাড়া একটি আসনে মাত্র তিনটি মাইকে প্রচারের সীমাবদ্ধতা পুনর্বিবেচনার দাবি করেন তিনি। ভোটার তালিকায় স্পষ্ট ছবি মুদ্রণের বিষয়টিও তিনি গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করেন।
মনোনয়ন জমার সময় রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ‘আন্ডারটেকিং’ নেওয়ার নির্দেশনার বিষয়েও পরিষ্কার ব্যাখ্যার দাবি জানানো হয়।
প্রশাসন ও পুলিশ বদলি নিয়েও প্রশ্ন
সংলাপে জামায়াতের নেতারা সাম্প্রতিক সরকারি কর্মচারী ও পুলিশের বদলি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। গোলাম পরওয়ার বলেন, বদলিগুলো “পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক” মনে হয়। তিনি বলেন, নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পর একদিনেই সব ডিসি-এসপি বদলি করা উচিত— যা অতীতেও করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার জন্য লটারি পদ্ধতিতে বদলি করা যেতে পারে।”
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, সরকারের পরিবর্তন হলেও মাঠ প্রশাসনে 'মূলগত পরিবর্তন' হয়নি। নির্বাহী পর্যায়ে সমন্বয় না হলে নির্বাচন প্রভাবিত হতে পারে বলে তিনি সতর্ক করেন।
তিনি আরও বলেন, নিয়োগ-বদলি গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নয়— বরং লটারি পদ্ধতিতে হওয়া উচিত, যাতে পক্ষপাতিত্বের সুযোগ না থাকে। প্রশাসনিক স্বচ্ছতার অভাব সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) বাধাগ্রস্ত করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংলাপের শেষে অ্যাডভোকেট শিসির মনির আবারও বলেন, আচরণবিধির খসড়ায় দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক দলকে জরিমানা করার পদ্ধতি নিয়ে এখনো অস্পষ্টতা রয়ে গেছে।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.