11/19/2025 মৃত্যুদণ্ড নীতিমালা সম্পর্কে মিশ্র বৈশ্বিক চিত্র
মুনা নিউজ ডেস্ক
১৮ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:২৫
যুক্তরাষ্ট্রে গত বছরের জানুয়ারি মাসে একজন দণ্ডিত খুনিকে নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ পদ্ধতিতে কারও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘটনা দেশটিতে এটাই প্রথম।
জাপানেও এক ব্যক্তিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কারণ, তিনি যে অগ্নিসংযোগ করেছিলেন, তাতে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
এদিকে বাংলাদেশে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাকে গতকাল সোমবার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।
বিশ্বজুড়েই মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা বাড়ছে, যদিও অনেক দেশ এ শাস্তি পুরোপুরি বা আংশিকভাবে বাতিল করে দিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্বের কোন দেশগুলোয় বিভিন্ন অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে এবং কোন সব দেশ এ সাজা বাদ দিয়েছে, দেখা নেওয়া যাক।
বিবিসি বলেছে, লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৯টি দেশ শুধু ‘সবচেয়ে গুরুতর’ অপরাধে (যেমন একাধিক খুন, যুদ্ধাপরাধ) মৃত্যুদণ্ড কার্যকর রেখেছে। ২৩টি দেশ মৃত্যুদণ্ড আইনে রাখলেও গত ১০ বছরে একবারও তা কার্যকর করেনি।
‘ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ’ ২০২৫ সালে তাদের এক প্রতিবেদনে মৃত্যুদণ্ড বৈধ—এমন ৫৫টি দেশ ও অঞ্চলের একটি তালিকা দিয়েছে। দেশগুলো হলো ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, বাংলাদেশ, ইথিওপিয়া, জাপান, মিসর, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (ডিআর কঙ্গো), ভিয়েতনাম, ইরান, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, সুদান, উগান্ডা, ইরাক, আফগানিস্তান, ইয়েমেন, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া, তাইওয়ান।
আরও আছে সোমালিয়া, জিম্বাবুয়ে, দক্ষিণ সুদান, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কিউবা, বেলারুশ, লিবিয়া, সিঙ্গাপুর, লেবানন, ফিলিস্তিন, ওমান, কুয়েত, কাতার, জ্যামাইকা, গাম্বিয়া, বতসোয়ানা, লেসোথো, বাহরাইন, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, কোমোরস, গায়ানা, বেলিজ, বাহামাস, বার্বাডোস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রানাডাইনস, অ্যান্টিগুয়া ও বার্বুডা, ডোমিনিকা এবং সেন্ট কিটস ও নেভিস।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সরকারি পরিসংখ্যান, সংবাদমাধ্যমের তথ্য এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পরিবার ও প্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য মিলিয়ে এ বিষয়ে হিসাব তৈরি করেছে।
সংস্থাটির ধারণা, চীনই বিশ্বের সবচেয়ে বড় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকারী দেশ। দেশটিতে প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তবে দেশটি এ–সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রকাশ না করায় সঠিক সংখ্যা জানা অসম্ভব।
চীন বাদে ২০২২ সালে বিশ্বে ৮৮৩টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। এটি ২০১৭ সালের পর সবচেয়ে বেশি। তবে ১৯৮৮, ১৯৮৯ বা ২০১৫ সালের তুলনায় এ সংখ্যা অনেক কম। এ সালগুলোয় প্রতিবছর ১ হাজার ৫০০–এর বেশি মানুষ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন।
অ্যামনেস্টির হিসাবে, ২০২২ সালে অন্তত ২ হাজার ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, ৫২টি দেশে। ওই বছর বিশ্বজুড়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা নিয়ে কারাগারে ছিলেন ২৮ হাজার ২৮২ জন।
অনেক বন্দী মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে বছরের পর বছর, কখনো কখনো দশক ধরে কনডেমড সেলে অপেক্ষা করেন।
২০২২ সালে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে ২০টি দেশ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। ২০২১ সালে এ সংখ্যা ছিল ১৮। চীন ছাড়া সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান, সৌদি আরব, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের হিসাবে, ২০২২ সালে ইরানে কমপক্ষে তিনটি প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশটি পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। ১৮ বছরের কম বয়সী থাকার সময় তাঁরা সংশ্লিষ্ট অপরাধ সংঘটিত করেছিলেন।
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের ১১টি দেশ নিয়মিতভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। এর মধ্যে রয়েছে—চীন, মিসর, ইরান, ইরাক, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, ইয়েমেন।
সংস্থাটি মনে করে, উত্তর কোরিয়াও ধারাবাহিকভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে; যদিও এটি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি।
সৌদি আরব ২০২২ সালে বিগত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। আর বাহরাইন, কমোরস, লাওস, নাইজার ও দক্ষিণ কোরিয়া—এ পাঁচ দেশে কয়েক বছর ব্যবহার না হলেও ২০২২ সালে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ২০২১ সালের তুলনায় মৃত্যুদণ্ড বেড়েছে। তবে তা এখনো ১৯৯৯ সালের সর্বোচ্চ সংখ্যার বেশ নিচে।
যেসব গুরুতর অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, সেসবের অন্যতম মাদক–সংশ্লিষ্ট। অ্যামনেস্টির মতে, ২০২২ সালে মাদকসংক্রান্ত অপরাধে ৩২৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫৫ জন ইরানে, ৫৭ জন সৌদি আরবে, ১১ জন সিঙ্গাপুরে।
২০২৩ সালে সিঙ্গাপুর প্রায় ২০ বছর পর প্রথমবারের মতো একজন নারী অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। সারিদেভি জামান নামের এ নারী ২০১৮ সালে হেরোইন পাচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।
২০২২ সালে বিশ্বে ১১২টি দেশে মৃত্যুদণ্ড আদৌ কার্যকর করা হয়নি। ১৯৯১ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪৮।
২০২২ সালে ছয়টি দেশ মৃত্যুদণ্ড আংশিক বা পুরোপুরি বাতিল করেছে। এর মধ্যে কাজাখস্তান, পাপুয়া নিউগিনি, সিয়েরা লিওন ও মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র মৃত্যুদণ্ড পুরোপুরি বাতিল করেছে।
আর ইকুয়েটোরিয়াল গিনি ও জাম্বিয়া জানিয়েছে, মৃত্যুদণ্ড শুধু ‘সবচেয়ে গুরুতর’ অপরাধে প্রযোজ্য হবে।
২০২৩ সালের এপ্রিলে মালয়েশিয়ার সংসদ ১১টি গুরুতর অপরাধে (যেমন হত্যা ও সন্ত্রাসবাদ) বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ড তুলে দেওয়ার পক্ষে ভোট দেয়।
২০২৩ সালের জুলাইয়ে ঘানার সংসদ মৃত্যুদণ্ড বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।
মৃত্যুদণ্ড বাতিল করা দেশগুলো হলো (ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউর তথ্য অনুযায়ী) মেক্সিকো, ফিলিপাইন, তুরস্ক, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইতালি, কলম্বিয়া, স্পেন, আর্জেন্টিনা, কানাডা, অ্যাঙ্গোলা, ইউক্রেন, পোল্যান্ড, উজবেকিস্তান, মোজাম্বিক, মাদাগাস্কার, আইভরিকোস্ট, নেপাল, ভেনেজুয়েলা, অস্ট্রেলিয়া, চাদ, কাজাখস্তান, সেনেগাল, রোমানিয়া, নেদারল্যান্ডস, ইকুয়েডর, কম্বোডিয়া, গিনি, বেনিন, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, বলিভিয়া, হাইতি, বেলজিয়াম, ডোমিনিকান রিপাবলিক, হন্ডুরাস, পাপুয়া নিউগিনি, সুইডেন, চেকিয়া।
আরও আছে পর্তুগাল, আজারবাইজান, গ্রিস, টোগো, হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, সিয়েরা লিওন, তুর্কমেনিস্তান, কিরগিজস্তান, প্যারাগুয়ে, নিকারাগুয়া, বুলগেরিয়া, সার্বিয়া, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, কোস্টারিকা, পানামা, ক্রোয়েশিয়া, জর্জিয়া, মঙ্গোলিয়া, উরুগুয়ে, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, নামিবিয়া, মলদোভা, আর্মেনিয়া, লিথুয়ানিয়া, আলবেনিয়া, গ্যাবন, গিনি-বিসাউ, স্লোভেনিয়া, লাটভিয়া, উত্তর মেসিডোনিয়া, তিমুর-লেস্তে।
অন্য দেশগুলো হলো সাইপ্রাস, এস্তোনিয়া, মরিশাস, জিবুতি, ফিজি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, ভুটান, লুক্সেমবার্গ, সুরিনাম, মন্টেনেগ্রো, মাল্টা, কেপ ভার্দে, আইসল্যান্ড, ভানুয়াতু, সাওতমে ও প্রিন্সিপে, সামোয়া, কিরিবাতি, সেশেলস, মাইক্রোনেশিয়া, অ্যান্ডোরা, লিচেনস্টেইন, মোনাকো, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, সান মারিনো, পালাউ, কুক দ্বীপপুঞ্জ, নাউরু, টুভালু, নিউই ও ভ্যাটিকান সিটি।
২০২২ সালে সৌদি আরবই একমাত্র দেশ, যারা শিরশ্ছেদকে মৃত্যুদণ্ডের আনুষ্ঠানিক পদ্ধতি হিসেবে উল্লেখ করেছে। অন্য দেশে ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে ফাঁসি, প্রাণনাশী ইনজেকশন ও গুলিতে মৃত্যুদণ্ড।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা অঙ্গরাজ্যে কেনেথ স্মিথ নামের এক খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে। দেশটির ডেথ পেনাল্টি ইনফরমেশন সেন্টারের মতে, বিশ্বে এভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা এটাই প্রথম।
স্মিথের আইনজীবীরা এ পরীক্ষাহীন পদ্ধতিকে বলেছেন ‘নিষ্ঠুর ও অস্বাভাবিক’।
আলাবামাসহ যুক্তরাষ্ট্রের আরও দুটি অঙ্গরাজ্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ক্ষেত্রে নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করার অনুমোদন দিয়েছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ওষুধের সংকট দেশটিতে এ সাজা কার্যকর করার হার কমে যাওয়ার অন্যতম বড় কারণ।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.