11/16/2025 এইচ-১বি ভিসা বন্ধে কংগ্রেসে বিল, বিদেশিদের জন্য দুঃসংবাদ
মুনা নিউজ ডেস্ক
১৫ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:২২
যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি দক্ষ কর্মী আনার সবচেয়ে বড় ভিসা কর্মসূচি এইচ-১বি পুরোপুরি বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। একের পর এক নিয়ম বদলানোর পর এবার এটি বাতিলে কংগ্রেসে প্রস্তাব তোলা হয়েছে।
কট্টর ডানপন্থি ও অভিবাসনবিরোধী হিসেবে পরিচিত প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য মার্জোরি টেইলর গ্রিন গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বিলটি উত্থাপন করেন। বিলটি উপস্থাপনের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক ভিডিও বার্তায় গ্রিন বলেন, এইচ-১বি কর্মসূচি ‘প্রতারণা ও অপব্যবহারে ভরা’, যা বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মীদের ‘বঞ্চনার’ মুখে ফেলেছে।
তার দাবি, এইচ-১বি ভিসা ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি ও হাসপাতালগুলো আমেরিকান নাগরিকদের বাদ দিয়ে বিদেশিদের চাকরি দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিলটি পাস হলে বিজ্ঞান–প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রকৌশলসহ সব খাতে আমেরিকানদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে ‘বিদেশি মেধার ওপর নির্ভরতা কমাতে’ এই কর্মসূচি বাতিল করা প্রয়োজন বলে মত দেন গ্রিন।
তবে নতুন বিলে বিদেশি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সীমিত ছাড় রাখা হয়েছে। প্রতি বছর সর্বোচ্চ ১০ হাজার জনকে নেয়ার সুপারিশ রয়েছে। তবে তারা আর আমেরিকান নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
২০০৪ সালে চালু হওয়া এইচ-১বি ভিসায় প্রতি বছর ৮৫ হাজার বিদেশি বিশেষজ্ঞ যুক্তরাষ্ট্রে কাজের অনুমতি পান। অ্যামাজন, গুগল, মাইক্রোসফট, মেটা ও অ্যাপলের মতো যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কোম্পানিগুলো এই ভিসার সুবিধা নেয়। ভারতীয়রা এই কর্মসূচির সবচেয়ে বড় উপকারভোগী।
হাজার হাজার ভারতীয় পেশাজীবী এই ভিসার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করছেন। শুধু কাজের সুযোগই নয়, এইচ-১বি ভিসাধারীরা নির্দিষ্ট সময় পর যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি এবং পরবর্তীতে নাগরিকত্বের জন্যও আবেদন করতে পারতেন।
তবে দ্বিতীয় ক্ষমতা গ্রহণের পর অভিবাসনবিরোধী পদক্ষেপের ধারাবাহিকতায় এইচ-১বি ভিসা সংক্রান্ত নিয়মে গত কয়েক মাসে একের পর এক বদল এনেছে ট্রাম্প প্রশাসন। প্রথমেই জানানো হয়, এখন থেকে এই ভিসার জন্য সংস্থাগুলোর কাছ থেকে এক লক্ষ ডলার নেয়া হবে।
তবে যাদের ইতিমধ্যেই এইচ-১বি ভিসা রয়েছে, তাদের দেশে পুনঃপ্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো টাকা দিতে হবে না। কেবলমাত্র যারা নতুন করে এইচ-১বি ভিসার জন্য আবেদন করবেন, তাদের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে এক লক্ষ ডলার দিতে হবে সরকারকে। শুধু তা-ই নয়, প্রচলিত লটারি ব্যবস্থা বাতিল করে একটি নতুন বাছাইয়ের প্রক্রিয়াও চালু করা হবে জানায় ওয়াশিংটন।
তবে চলতি সপ্তাহে এইচ-১বি ভিসা ইস্যুতে সুর কিছুটা নরম করে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে সত্যিই বিদেশি প্রতিভা আনা প্রয়োজন। কারণ এখনও বিভিন্ন ক্ষেত্রে জ্ঞান ও দক্ষতার নিরিখে পিছিয়ে রয়েছেন কর্মীরা। সেই মন্তব্যেরই ব্যাখ্যা দেন স্কট।
তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের দৃষ্টিভঙ্গি হলো বিদেশি কর্মীদের তিন, পাঁচ বা সাত বছরের জন্য আমেরিকায় নিয়ে আসা। এখানে আমেরিকান কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবেন তারা। তার পর দেশে ফিরে যাবেন এবং তাদের জায়গায় আমেরিকান কর্মীরা দায়িত্ব গ্রহণ করবে।’ এইচ-১বি ভিসা সংক্রান্ত এই নতুন নীতিকে ‘জ্ঞান আদানপ্রদানের প্রচেষ্টা’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন স্কট।
এরপর এইচ-১বি ভিসার নিয়মে আরও একবার পরিবর্তন এনেছে ট্রাম্প প্রশাসন। জানিয়েছে, এখন থেকে বিদেশি কর্মীদের অস্থায়ীভাবে এইচ-১বি ভিসা প্রদান করা হবে। আগামী বছরের শুরু থেকেই চালু হতে যাচ্ছে নতুন নিয়ম।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মীরা এখন থেকে কয়েক বছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আসতে পারবেন। এরপর তারা আমেরিকান কর্মীদের ‘প্রশিক্ষণ’ দেবেন। প্রশিক্ষণ শেষে তারা আর থাকতে পারবে না। ফিরতে হবে নিজ দেশে।
ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, নতুন এইচ-১বি ভিসা নীতির লক্ষ্য হলো বিদেশি কর্মীদের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নির্ভরতার পরিবর্তে উচ্চ-দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের এনে আমেরিকানদের চাকরির জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া, যাতে তারাও সমান দক্ষ হয়ে ওঠেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাণিজ্যমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানান, এখন থেকে শুধু দক্ষ বিদেশি কর্মীদের সাময়িকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আনা হবে।
তিনি বলেন, ‘গত প্রায় ২০-৩০ বছর ধরে আমরা বাইরে থেকে উৎপাদন শিল্পের জন্য লোক এনেছি। ফলে আমরা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি না যে রাতারাতি জাহাজ তৈরি করে ফেলতে পারব। আমরা সেমিকন্ডাক্টর শিল্পকেও আমেরিকায় ফিরিয়ে আনতে চাই। তাই আমেরিকান উৎপাদন খাতকে পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যেই এই নতুন নীতি।’
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.