10/20/2025 ট্রাম্পের কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ; ৭০ লক্ষ আমেরিকান মিছিল নিয়ে রাস্তায়
মুনা নিউজ ডেস্ক
১৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:১১
প্রেসিডেন্ট ক্রমেই পুরোনো আমলের রাজা–বাদশাহদের মতো আচরণ করছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ধ্বংস করে দিচ্ছেন। এমন অভিযোগ তুলে তাঁর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অন্তত ৭০ লাখ মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবর থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী পেগি কোল তাঁর ৭০ তম জন্মদিন উদ্যাপন করতে শনিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে যান। তিনি মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ফ্লিন্ট শহরের বাসিন্দা। প্রায় ১০ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে ওয়াশিংটনে পৌঁছে কোল ট্রাম্পের ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী আচরণের বিরুদ্ধে আয়োজিত ‘নো কিংস’ বিক্ষোভে যোগ দেন। কোল বলেন, এই বড় ধরনের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া তাঁর জন্য আবশ্যক ছিল। কারণ এই মুহূর্তটি আমেরিকানদের জন্য ‘ভয়ংকর সময়’ এবং গণতন্ত্র সংকটের মুখে।
কোল আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, (ট্রাম্প) আমাদের সরকার, আমাদের গণতন্ত্র ধীরে ধীরে ভেঙে দিচ্ছেন। যদি আমরা বসে থাকি এবং কিছু না করি, তবে তা ধীরে ধীরে টুকরো টুকরো করে ধ্বংস হবে।’
স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত ২ হাজার ৭০০ টিরও বেশি ‘নো কিংস’ বিক্ষোভ মিছিল হয়। এই বিক্ষোভে সংগঠকেরা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘নির্বাচিত কর্তৃত্ববাদী’ এজেন্ডার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। জুন মাসে প্রথম বিক্ষোভের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ রাস্তায় নামে। এবার সেই সংখ্যার তুলনায় শতাধিক বেশি র্যালি অনুষ্ঠিত হলো।
সিএনএন জানিয়েছে, শনিবারের শোভাযাত্রায় প্রায় ৭০ লাখ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে, কেবল নিউইয়র্কেই ১ লাখের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছিল বলে জানিয়েছে আয়োজক সংগঠনের কর্মকর্তারা। বড় শহরে আয়োজন হওয়া র্যালির পাশাপাশি ছোট শহর, জনবহুল রাস্তা এবং পার্কেও ‘নো কিংস’ আন্দোলনের ছোট ছোট দলগুলো দেখা গেছে।
এই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের আয়োজনের পেছনে ছিল যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ব্যাপক অভিবাসন রেইড, ফেডারেল অভিবাসন প্রয়োগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন শহরে ফেডারেল সেনাদের মোতায়েনের প্রেক্ষাপট।
দিনের শেষ দিকে কিছু লোক বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে সমস্যা সৃষ্টি করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। সাউথ ক্যারোলিনায় একজন নারী গাড়ি চালানোর সময় আগ্নেয়াস্ত্র দেখানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। জর্জিয়ায় এক পুরুষ ভিডিওতে ধরা পড়ে যে, তিনি এক বিক্ষোভকারীর পতাকা ছিনিয়ে নেন এবং অন্য একজনকে মাটিতে ঠেলেন।
যদিও ট্রাম্প প্রশাসন ও কিছু রিপাবলিকান কর্মকর্তা প্রতিবাদগুলোকে ‘হিংস্র কট্টর বামপন্থীদের কাজ’ হিসেবে চিত্রিত করেছেন। ‘নো কিংস’ বিক্ষোভের আয়োজক সংগঠন ইন্ডিভিজিবল প্রজেক্ট বলেছে, তারা ‘অহিংস আন্দোলনে’ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং নিরাপত্তা ও উত্তেজনা কমানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছে হাজার হাজার মানুষকে। দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক হিংসা বৃদ্ধি পাওয়ায় এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
কিছু বিক্ষোভকারী হলুদ রঙের পোশাক পরেছিলেন। সংগঠকদের মতে, এটি একতা ও অন্যান্য অহিংস প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতি একটি রেফারেন্স। ইন্ডিভিজিবল প্রজেক্টসের ওয়েবসাইটে লেখা আছে, ‘হলুদ রং আমাদের সবাইকে মনে করিয়ে দেয় যে, লাখো মানুষ একত্রিত হয়েছেন এই বিশ্বাসের সঙ্গে যে—আমেরিকা তার জনগণেরই।’
অন্যান্য বিক্ষোভকারীরা বেলুন দিয়ে বানানো মুরগি, ব্যাঙ এবং ডাইনোসর পোশাক পরে এসেছিলেন, যা বিক্ষোভের শান্তিপূর্ণ প্রকৃতি ফুটিয়ে তোলে। লস অ্যাঞ্জেলেসের এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘যখন আপনি কিছু দেখেন যা ব্লক পার্টির মতো, হ্যালোউইনের পোশাক পরা মানুষ নাচছে, তখন এটিকে যুদ্ধক্ষেত্র বলা সত্যিই কঠিন।’
বিক্ষোভকারীরা মেগাফোনে চিৎকার করে স্লোগান দেন—‘এটাই গণতন্ত্রের চেহারা’, ‘ঘৃণা নয়, ভয় নয়, অভিবাসীরা এখানে স্বাগত।’ তারা আমেরিকান পতাকা হাতে তুলে ধরে স্বৈরতান্ত্রিকতা ও বিলিয়নিয়ারদের বিরোধী প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.