10/19/2025 মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে হবে
মুনা নিউজ ডেস্ক
১৮ অক্টোবর ২০২৫ ১৮:১০
চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ এক প্রতিবেদনে শেখ হাসিনাকে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের খালা পরিচয় দিয়ে বলেছে, ৭৮ বছর বয়সি শেখ হাসিনা বর্তমানে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহার করার নির্দেশ দেন। যার ফলে প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়।
প্রসিকিউশন দাবি করেছে, শেখ হাসিনার আদেশেই দমন অভিযানের সময় নিহতদের লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং আহতদের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়। শেখ হাসিনা অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, তার ১৫ বছরের শাসন অবসানের সময় যে গণঅভ্যুত্থান হয়, তাতে আনুমানিক ১,৪০০ জন প্রাণ হারায়।
এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ২০২৪ সালের জুলাই মাসে—মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সন্তানদের জন্য সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ থেকে। অল্প সময়ের মধ্যেই তা শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলনে রূপ নেয়।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে দেশত্যাগ করেন, কিছুক্ষণ পরেই ঢাকায় বিক্ষোভকারীরা তার সরকারি বাসভবনে প্রবেশ করে। একই দিনে ঢাকার একটি ব্যস্ত এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৫২ জন নিহত হয়— যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম রক্তক্ষয়ী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত।
তার শাসনামলে ব্যাপক ভোট কারচুপি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে গ্রেফতার, নির্যাতন ও গুমের অভিযোগ উঠেছিল— যার মধ্যে শিশুদের গুমের ঘটনাও ছিল।
প্রসিকিউটর ময়নুল করিম জানান, তার দল ফোন রেকর্ড, অডিও-ভিডিও প্রমাণ এবং সাক্ষ্য সংগ্রহ করেছে, যা শেখ হাসিনাকে সরাসরি ওই হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে যুক্ত করে।
তিনি বলেন, আমরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারব যে, তিনি মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য। তার সরাসরি নির্দেশেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
আদালত ইতোমধ্যেই শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে; ধারণা করা হচ্ছে তারা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।
অন্যদিকে, সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে জুলাই মাসে গ্রেফতার করা হয় এবং তিনি দোষ স্বীকার করেছেন।
তিনি স্বীকারোক্তিতে বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশেই তিনি বিক্ষোভকারীদের ওপর হেলিকপ্টার ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিলেন এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন।
প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদালতে বলেন, শেখ হাসিনা ১,৪০০ বার মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য। যেহেতু তা মানবিকভাবে সম্ভব নয়, তাই আমরা অন্তত একটি মৃত্যুদণ্ড দাবি করছি।
তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা, নিজের ও পরিবারের জন্য। তিনি এক কঠোর অপরাধীতে পরিণত হয়েছেন এবং তার বর্বরতার জন্য কোনও অনুশোচনাও প্রকাশ করেননি, যোগ করেন তিনি।
এদিকে রবিবার থেকে শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবীরা তাদের যুক্তি উপস্থাপন শুরু করবেন, যা আগামী সপ্তাহে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চূড়ান্ত রায় নভেম্বরের মধ্যভাগে ঘোষণা করা হতে পারে।
অভিযোগ প্রমাণিত হলে শেখ হাসিনার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও নিলামে বিক্রির প্রক্রিয়াও শুরু হতে পারে, যার অর্থ ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।
তার রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর দাবি, বিক্ষোভকারীদের সহিংস হামলার জবাবে বাধ্য হয়েই পুলিশ গুলি চালায়।
শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই আদালত অবমাননার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এবং তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাও চলছে।
অন্যদিকে, ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক— যিনি এ বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্য সরকারের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন—তিনিও বাংলাদেশে অনুপস্থিত অবস্থায় বিচারাধীন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তার খালার প্রভাব ব্যবহার করে নিজের পরিবারের জন্য জমির প্লট বরাদ্দে প্রভাব খাটিয়েছেন। যদিও তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, যেখানে শেখ হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপি এখন ফেভারিট হিসেবে বিবেচিত।
তবে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.