10/14/2025 আসাদের পর সিরিয়ায় প্রথম নির্বাচন, তবে সব প্রদেশে নয়
মুনা নিউজ ডেস্ক
৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:৩৩
সিরিয়ায় গত বছরের ডিসেম্বরে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকার পতনের পর প্রথমবারের মতো দেশটিতে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সময় আজ রোববার সকালে দেশটির বেশির ভাগ অংশে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। দেশটির কর্মকর্তারা একে যুদ্ধোত্তর রাজনৈতিক পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলে উল্লেখ করেছেন। তবে সব প্রদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, সিরিয়ার সুপ্রিম কমিটি ফর পিপলস অ্যাসেম্বলি ইলেকশন জানিয়েছে—স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে বেশির ভাগ প্রদেশে ভোটকেন্দ্র খোলা হয়। অনুমোদিত নির্বাচনী সংস্থার সদস্যরা সরকারি ভোটার কার্ড ব্যবহার করে ভোট দেন।
সিরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, প্রাথমিক ফল আজ রোববার রাতেই ঘোষণা করা হবে। আর চূড়ান্ত ফল সোমবার প্রকাশের কথা। নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র নাওয়ার নাজমেহ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জানান, এ ভোট হচ্ছে নতুন একটি অস্থায়ী আইন কাঠামোর অধীনে। চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারা এক ডিক্রির মাধ্যমে এই কাঠামো চালু করেন। সেই ডিক্রি অনুযায়ী ১০ সদস্যের জাতীয় নির্বাচন কমিটি গঠিত হয় এবং নতুন নিয়ম চালু হয়।
এ নির্বাচনে সিরিয়ার পার্লামেন্টের ২১০টি আসন পূরণ করা হবে। ব্যবস্থাটি মিশ্র ধরনের—যেখানে দুই-তৃতীয়াংশ এমপি স্থানীয় সংস্থার মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন, এক-তৃতীয়াংশ সরাসরি প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করবেন। আসনগুলো জনসংখ্যা ও সামাজিক প্রতিনিধিত্ব অনুযায়ী বণ্টন করা হয়েছে।
তবে সব প্রদেশে ভোট হচ্ছে না। রাক্কা ও হাসাকা প্রদেশের বেশির ভাগ এলাকায় ভোট স্থগিত রাখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিরাপত্তা ও লজিস্টিক কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সুয়েইদা প্রদেশের সব আসনও আপাতত খালি থাকবে। কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘যখন উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হবে, তখন নির্বাচন হবে।’
বর্তমানে রাক্কা ও হাসাকা কুর্দি নেতৃত্বাধীন ওয়াইপিজি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। সুয়েইদা দ্রুজ ধর্মীয় নেতা হিকমাত আল হিজরির অনুগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে। এই তিনটি অঞ্চল সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
প্রায় ১০ দিনের প্রচার শেষে শুক্রবার নির্বাচনী কার্যক্রম শেষ হয়। এ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন মোট ১ হাজার ৫৭৮ জন। এর মধ্যে নারী প্রার্থীর হার ১৪ শতাংশ। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আসাদ সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
ভোটকেন্দ্র স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকার কথা থাকলেও প্রয়োজনে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময় বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার তিন ঘণ্টা পর থেকে প্রকাশ্যে গণনা শুরু হবে। গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে গণনা সম্পন্ন হবে।
নতুন কাঠামোয় পার্লামেন্টে নারীদের জন্য ২০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। পার্লামেন্টের মেয়াদ হবে আড়াই বছর। এই সময়ে সরকার দেশটির প্রথম সরাসরি জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নেবে। তবে কুর্দি নিয়ন্ত্রিত ও দ্রুজ অধ্যুষিত এলাকা বাদ পড়া, আবার ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জন্য কোনো কোটা না থাকায় নতুন পার্লামেন্ট কতটা সিরিয়ার বহুবর্ণ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সম্প্রতি দেশটিতে সাম্প্রদায়িক সংঘাত বেড়ে যাওয়ায় এ প্রশ্ন আরও গুরুত্ব পেয়েছে। গত কয়েক মাসে আলভী ও দ্রুজ সম্প্রদায়ের শত শত সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, এ হত্যাকাণ্ডের অনেকগুলো ঘটেছে সরকারপন্থি বাহিনীর হাতে।
যে পদ্ধতিতে হলো এই নির্বাচন
সিরিয়ার পার্লামেন্টের মোট ২১০টি আসনের মধ্যে ১৪০টি আসনের জন্য ভোট হবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গঠিত ইলেক্টোরাল কলেজের মাধ্যমে। প্রতিটি জেলার জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন ভাগ করা হয়েছে। বাকি ৭০ জন সদস্যকে সরাসরি নিয়োগ দেবেন আল শারা।
মোট ৬০টি জেলার ৭ হাজার ইলেক্টোরাল কলেজ সদস্য ভোট দিয়ে ১৪০ আসনের প্রতিনিধি ঠিক করবেন। এই সদস্যদের আবার নির্বাচন করা হয়েছে, যারা সংশ্লিষ্ট জেলায় ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটার হওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন তাদের মধ্য থেকে।
সব প্রার্থী ইলেক্টোরাল কলেজ থেকেই আসছেন এবং সবাই স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছেন। কারণ, বাশার আল আসাদের পতনের পর পর সিরিয়ার নতুন কর্তৃপক্ষ বিদ্যমান সব রাজনৈতিক দল ভেঙে দিয়েছে। নতুন দল নিবন্ধনের কোনো ব্যবস্থা এখনো চালু হয়নি।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.