10/14/2025 ব্যবসায়িক মন্দা এবং রাজস্ব ঘাটতি সত্ত্বেও বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়াবে আইএমএফ
মুনা নিউজ ডেস্ক
২ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:৪২
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ এখন রাজস্ব ঘাটতি। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই কর আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাব বলছে, জুলাই-আগস্টে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৪ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। অথচ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭১ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকায়।
বাংলাদেশে কর আদায়ের প্রবৃদ্ধি দীর্ঘদিন ধরেই নিম্নমুখী। গত এক দশকে যেখানে প্রতিবেশী দেশগুলো কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে সক্ষম হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ পিছিয়েছে। চলতি অর্থবছরের শুরুতেই কর-জিডিপি অনুপাত নেমে এসেছে ৬.৬ শতাংশে, যা গত বছরের ৭ শতাংশের তুলনায় কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ হার আরও কমতে থাকলে রাষ্ট্রের উন্নয়ন ব্যয় ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি হুমকির মুখে পড়তে পারে।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, ভ্যাট ও কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতার অভাব এবং ব্যবসা করার অনিশ্চয়তা কর আদায়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রপ্তানি খাত ও অভ্যন্তরীণ বাজারে মন্দার প্রভাব পড়েছে রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে। তাছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিও কর আহরণকে কঠিন করে তুলেছে।
বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বড় ঋণ কর্মসূচির অধীনে রয়েছে। এ ঋণ পেতে হলে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে হবে বলে সংস্থাটি বারবার শর্ত দিয়েছে। আইএমএফ চায়, বাংলাদেশ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কর-জিডিপি অনুপাত অন্তত ৯ শতাংশে নিয়ে যাক। কিন্তু চলমান প্রবণতা বলছে, বরং এ হার কমছে। এ অবস্থায় নভেম্বর মাসে ঢাকায় আসা আইএমএফ মিশনের সঙ্গে বৈঠকে এনবিআরের কর্মকর্তাদের কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে।
এনবিআরের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি কেবল ব্যর্থতা নয়; বরং এটি সামষ্টিক অর্থনীতির সংকটের প্রতিফলন। তারা দাবি করছেন, ব্যবসায় আস্থা ফেরানো, কর প্রশাসনকে আধুনিকায়ন করা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব নয়। তবে আইএমএফের শর্ত পূরণে তারা নতুন করনীতি ও ভ্যাট ব্যবস্থার সংস্কারের কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, কর কাঠামোয় সংস্কার না করলে রাজস্ব আদায়ে বড় অগ্রগতি সম্ভব নয়। কালো অর্থ বৈধকরণ, আমদানি শুল্কনির্ভর রাজস্ব নীতি এবং কর ফাঁকির সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে না পারলে কর-জিডিপি অনুপাত কখনোই টেকসই হবে না। একইসঙ্গে ব্যবসায় খাতকে স্বস্তি না দিলে রাজস্ব ঘাটতি আরও বাড়বে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী বাজেটে সরকারের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪.৯৯ লাখ কোটি টাকা। বছরের শুরুতেই বড় ঘাটতি তৈরি হওয়ায় লক্ষ্য অর্জনে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বৈদেশিক ঋণ নির্ভর অর্থনীতিতে আইএমএফের শর্ত পূরণ না করলে নতুন ঋণ পাওয়া কঠিন হতে পারে। ফলে রাজস্ব সংগ্রহ শুধু অর্থনৈতিক লক্ষ্য নয়, কূটনৈতিক ও বৈদেশিক অর্থ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংস্কার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। স্বচ্ছতা, ন্যায়সঙ্গত করনীতি এবং ব্যবসায় আস্থা ফিরিয়ে আনতে না পারলে রাজস্ব ঘাটতি কাটবে না। এখন দেখার বিষয়—এনবিআর ও সরকার কীভাবে আইএমএফের কঠিন শর্ত মোকাবিলা করে সামনে এগোয়।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.