10/14/2025 ট্রাম্পের ‘অল ইন ওয়ান ডিল’ পর্যালোচনা করছে হামাস
মুনা নিউজ ডেস্ক
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:৪৮
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা হামাস পর্যালোচনা করছে বলে জানা গেছে। বিবিসির প্রতিবেদনে এই খবর বলা হয়েছে। যদি উভয় পক্ষ এই প্রস্তাবে সম্মত হয়, তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে এবং ইসরায়েলি সেনারা ‘সমঝোতাকৃত সীমারেখা’ পর্যন্ত প্রত্যাহার করবে।
একই সঙ্গে সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে, এরপর ধাপে ধাপে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি এবং গাজায় বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করানো হবে।
পরিকল্পনায় আরো বলা হয়েছে, গাজা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে পরিচালিত হবে। যেখানে ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা থাকবেন।
এর তদারকিতে গঠিত হবে নতুন আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘বোর্ড অব পিস’। এই সংস্থার প্রধান থাকবেন প্রেসিডেন্ট এবং তার সঙ্গে কাজ করবেন অন্যান্য আন্তর্জাতিক নেতারা।
যার মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। সোমবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানান।
এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা এখনো গাজাজুড়ে ‘সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।’ ট্রাম্পের নতুন শান্তি পরিকল্পনার দিকে বিশ্ব যখন মনোযোগ দিয়েছে, তখন ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় তাদের হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
সর্বশেষ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, গত এক দিনে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী গাজা উপত্যকায় অন্তত ১৬০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।
আগস্টের শুরুতে নেতানিয়াহু কর্তৃক ঘোষিত নতুন ইসরায়েলি অভিযানের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে গাজা শহর। ইসরায়েলি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশের পর থেকে গাজা শহরের বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়েছে, অন্যদিকে হামলার ফলে এলাকার বেশ কয়েকটি উঁচু ভবন ধসে পড়েছে।
যুদ্ধের সমাপ্তি নয়, বরং আলোচনা পুনঃস্থাপনের ভিত্তি
এদিকে বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, গাজা যুদ্ধ বন্ধে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ২০ দফা পরিকল্পনা যুদ্ধের সমাপ্তি বা যুদ্ধ-পরবর্তী শাসন ব্যবস্থা কেমন হবে, সেই সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা প্রদান করবে না। এটি মূলত একটি কাঠামো বা নীতি-নির্দেশনা, যা ভবিষ্যতে মধ্যস্থতায় আলোচনার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
এই প্রস্তাবকে ট্রাম্প নিজেই এক ধরনের ‘অল-ইন-ওয়ান ডিল’ বলেছেন। যেখানে জিম্মি ও বন্দিদের মুক্তি, ইসরায়েলি সেনাদের আংশিক প্রত্যাহার এবং পরবর্তী সময়ে গাজায় শাসন ও নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলার বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ট্রাম্পের প্রস্তাবে একটি রঙিন দিকও রয়েছে। তিনি নিজেই ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হবেন। অর্থাৎ কার্যত গাজার গভর্নর হিসেবে ভূমিকা রাখবেন।
এ ঘোষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল হোয়াইট হাউসে নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়ে তাকে এই নীতিমালা মেনে নিতে রাজি করানো। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই এতে সম্মতি দিয়েছে। এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা হামাসের।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই কাঠামো ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থানে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, যা আরব ও ইউরোপীয় দেশগুলোর চাহিদার কাছাকাছি। বিশেষ করে, ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর যৌথ ঘোষণায় থাকা বিতর্কিত ‘গাজা রিভিয়েরা পরিকল্পনা’। যেখানে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের ধারণা ছিল, তা এবার বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে প্রস্তাবটি এমনভাবে অস্পষ্ট রাখা হয়েছে যে, ফিলিস্তিনের আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে আরব রাষ্ট্রগুলো এবং নেতানিয়াহু সমর্থন জানাতে পারে। যদিও ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থীরা এর বিরোধিতা করবে।
সমালোচকরা বলছেন, পরিকল্পনার বহু অংশে স্পষ্টতা নেই। কিছু ধারায় মাত্র একটি বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ করে সেই জায়গাগুলোতেই, যেখানে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে মতবিরোধের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এখন হামাস কাতারসহ আরব দেশগুলোর চাপের মুখে এই নীতিমালা গ্রহণ করতে পারে। তবে প্রকৃত আলোচনা তখনই শুরু হবে। এ কারণে এই পরিকল্পনাকে যুদ্ধের অবসান নয়, বরং নতুন করে আলোচনার টেবিলে ফেরার ভিত্তি হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.