10/14/2025 গুরুত্বপূর্ণ কাজ ভারতের দিকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো
মুনা নিউজ ডেস্ক
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:৫২
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এইচ-১বি ভিসা (দক্ষ কর্মী ভিসা) নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ভারতের দিকে সরিয়ে নিতে উদ্বুদ্ধ করছে। অর্থনীতিবিদ ও শিল্পবিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে ভারতের গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টার (জিসিসি)–এর বিকাশ আরও দ্রুত হবে। কেন্দ্রগুলো অর্থনীতি থেকে শুরু করে গবেষণা, উন্নয়নসহ নানা কাজ করে থাকে।
বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ভারতে এখন ১ হাজার ৭০০টির মতো জিসিসি রয়েছে। এটি বিশ্বের মোট জিসিসির অর্ধেকের বেশি। শুরুর দিকে এগুলো প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে এলেও বর্তমানে বিলাসবহুল গাড়ির ড্যাশবোর্ডের নকশা থেকে ওষুধ আবিষ্কার পর্যন্ত উচ্চমূল্যের উদ্ভাবনী কাজ করছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার ও ভিসা–সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা ক্রমে বাড়তে থাকার মতো প্রবণতা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের শ্রম কৌশল পুনর্বিবেচনায় বাধ্য করছে। পাশাপাশি ভারতের জিসিসিগুলো এখন বৈশ্বিক দক্ষতা আর দেশীয় দক্ষ নেতৃত্ব একত্র করে স্থিতিশীল কেন্দ্র হিসেবে উঠে আসছে।
ডেলয়েট ইন্ডিয়ার অংশীদার ও জিসিসি খাতের নেতা রোহান লোবো বলেন, ‘জিসিসিগুলো এ সময়ের জন্য একেবারে উপযুক্ত। এগুলো প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অভ্যন্তরীণ ইঞ্জিনের মতো।’ রোহান জানান, তিনি এমন কয়েকটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের কথা জানেন, যেগুলো তাদের জনশক্তির চাহিদা পুনর্মূল্যায়ন করছে।
রোহান আরও বলেন, (যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ ভারতে সরিয়ে নেওয়ার) পরিকল্পনা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আর্থিক সেবা ও প্রযুক্তি খাতে আরও বড় পরিসরে তৎপরতা শুরুর দিকেই ইঙ্গিত করেন তিনি। বিশেষ করে ফেডারেল চুক্তিসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কার্যক্রম ত্বরান্বিত হচ্ছে। তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে জিসিসিগুলো আরও কৌশলগত ও উদ্ভাবননির্ভর দায়িত্ব নেবে।
এ মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নতুন এইচ-১বি ভিসার আবেদন ফি ২ হাজার থেকে ৫ হাজার ডলারের পরিবর্তে ১ লাখ ডলার করেছেন। এতে দক্ষ বিদেশি কর্মীর ওপর নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাপ বেড়েছে।
গতকাল সোমবার সিনেটররা আবারও একটি বিল উত্থাপন করেছেন; যেখানে এইচ-১বি ও এল-১ কর্মী ভিসা কর্মসূচির নিয়ম আরও কঠোর করার প্রস্তাব রয়েছে। তাঁরা বলছেন, বড় নিয়োগকর্তারা বিদ্যমান ভিসা নিয়ম–কানুনের ফাঁকফোকরের সুযোগের অপব্যবহার করছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের ভিসা–নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ যদি বহাল থাকে, তবে প্রতিষ্ঠানগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পণ্যের উন্নয়ন, সাইবার নিরাপত্তা ও বিশ্লেষণ–সংক্রান্ত উচ্চমূল্যের কাজ ভারতের জিসিসিতে সরিয়ে নেবে। এতে বাইরের প্রতিষ্ঠানের কাছে কাজ আউটসোর্স করার পরিবর্তে তা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে।
সাম্প্রতিক নানা পরিবর্তনে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তা থেকে অনেক প্রতিষ্ঠান উচ্চমূল্যের কাজ জিসিসিতে সরিয়ে নেওয়ার আলোচনা ত্বরান্বিত করেছে।
এএনএসআরের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ললিত আহুজা বলেন, ‘এখন জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’ এ পরিস্থিতি ফেডএক্স, ব্রিস্টল-মায়ার্স স্কুইব, টার্গেট ও লোয়েস–কে নিজস্ব জিসিসি গড়তে সহায়তা করেছে তাঁর প্রতিষ্ঠান।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন, মাইক্রোসফট, অ্যাপল ও গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট, ওয়াল স্ট্রিটের ব্যাংক জেপি মরগান চেজ ও খুচরা বিক্রেতা ওয়ালমার্ট এইচ-১বি ভিসার শীর্ষ পৃষ্ঠপোষক।
সব প্রতিষ্ঠানেরই ভারতে বড় ধরনের কার্যক্রম রয়েছে। তবে বিষয়টি (তাদের পরিকল্পনা) রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর হওয়ায় মন্তব্য করতে তারা রাজি হয়নি।
ভারতের একটি খুচরা জিসিসির প্রধান বলেন, ‘অতিরিক্ত ভূমিকা (প্রতিষ্ঠানগুলোর বাড়তি কাজ) হয় ভারতে সরবে, না হলে মেক্সিকো বা কলম্বিয়ায় সরবে। কানাডাও এ সুযোগ নিতে পারে।’
ট্রাম্পের নতুন ১ লাখ ডলার ভিসা ফি বসানোর আগে অনুমান করা হয়েছিল, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে ২ হাজার ২০০–এর বেশি প্রতিষ্ঠানের জিসিসি থাকবে, যার বাজারমূল্য হবে প্রায় ১০০ বিলিয়ন (১০ হাজার কোটি) ডলার।
ললিত আহুজা বলেন, ‘এ ‘‘সোনার খনি খোঁজা’’ শুধু আরও দ্রুততরই হবে।’
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.