09/17/2025 ২০২৪ সালে তাপপ্রবাহের কারণে বাংলাদেশের ক্ষতি হয়েছে ১.৮ বিলিয়ন ডলার : বিশ্বব্যাংক
মুনা নিউজ ডেস্ক
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৮:৩২
২০২৪ সালে তীব্র তাপজনিত শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার কারণে বাংলাদেশে প্রায় ২৫ কোটি কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়েছে। এর ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। এটি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। সোমবার বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
'অ্যান আনসাস্টেইনেবল লাইফ: দ্য ইমপ্যাক্ট অব হিট অন হেলথ অ্যান্ড দ্য ইকোনমি অব বাংলাদেশ' শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রায় বাংলাদেশে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ছে। একইসঙ্গে উৎপাদনশীলতা কমে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক ১৯৭৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জাতীয় তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার প্রবণতা বিশ্লেষণ করেছে। পাশাপাশি ২০২৪ সালে পরিচালিত দুই দফা জরিপে দেশের ১৬ হাজারের বেশি মানুষের মতামত সংগ্রহ করে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮০ সালের পর থেকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর মানুষের শরীরে অনুভূত তাপমাত্রা (ফিলস লাইক) বেড়েছে ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে ডায়রিয়া, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, শ্বাসকষ্ট ও অতিরিক্ত ক্লান্তির মতো স্বাস্থ্য সমস্যা বেড়েছে।
একই সঙ্গে তাপপ্রবাহ মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলছে। হতাশা ও উদ্বেগসহ নানা মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের বিভাগীয় পরিচালক জ্যঁ পেসমে বলেন, 'বাংলাদেশে তীব্র গরম কেবল ঋতুভিত্তিক অসুবিধা নয়, বরং এর প্রভাব বহুমুখী। আমরা দেখছি, তাপমাত্রা বাড়ায় মানুষের স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এর সঙ্গে দেশের সমৃদ্ধিও। তবে জলবায়ু অভিযোজনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবং সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে। ভালো খবর হলো, এটি সম্ভব—সিঙ্গাপুরসহ অন্য কিছু দেশ ইতোমধ্যেই তা দেখিয়েছে।'
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তীব্র গরমের ঝুঁকিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশের অবস্থান। রাজধানী ঢাকার হিট ইনডেক্স জাতীয় গড়ের তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি।
গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রীষ্মকালে ডায়রিয়া ও দীর্ঘস্থায়ী কাশির প্রকোপ শীতের তুলনায় দ্বিগুণ হয়। নারীরা তাপজনিত অসুস্থতা যেমন–হিট স্ট্রোক ও অবসাদে বেশি ভোগেন। মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও প্রভাব স্পষ্ট—গরমে হতাশা ও উদ্বেগ বেড়ে যায়। বয়সের সঙ্গে হতাশার হার বাড়তে থাকে, আর উদ্বেগ সর্বাধিক দেখা যায় ৫০ থেকে ৬৫ বছর বয়সীদের মধ্যে। শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণে গ্রীষ্মে কর্মক্ষমতার ক্ষতি শীতের তুলনায় বেশি হয়।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশনস অফিসার ও প্রতিবেদনের সহ-লেখক ইফফাত মাহমুদ বলেন, 'আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তাপের সংস্পর্শের সঙ্গে খারাপ স্বাস্থ্যজনিত ফলাফল ও উৎপাদনশীলতা হ্রাসের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশসহ বহু দেশ মানবসম্পদ ও উৎপাদনশীলতা হারানোর বাস্তব ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট নীতি ও বিনিয়োগের মাধ্যমে অভিযোজন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করলে সুস্থ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব।'
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাড়তে থাকা তীব্র গরমের ঝুঁকি মোকাবিলায় জরুরি ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। জাতীয় প্রস্তুতি বাড়াতে বহুখাতভিত্তিক পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে গরমজনিত রোগ মোকাবিলায় সক্ষম করে তুলতে হবে।
অভিযোজন ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে শহরে সবুজ স্থান সৃষ্টি, সুনির্দিষ্ট আবহাওয়া ও স্বাস্থ্যতথ্য সংগ্রহের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব কমাতে আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং সরকারি-বেসরকারি অর্থায়নও অপরিহার্য বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.