09/04/2025 দক্ষিণ ক্যারিবীয় সাগরে ভেনেজুয়েলার নৌকায় হামলা, নিহত ১১ জন
মুনা নিউজ ডেস্ক
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:২০
ভেনেজুয়েলা থেকে অস্ত্র চোরাচালানের অভিযোগে দক্ষিণ ক্যারিবীয় সাগরে একটি নৌকায় বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এ হামলাকে কাইনেটিক হামলা (বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র বা গুলি দিয়ে সরাসরি আক্রমণ করা) বলে অভিহিত করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, ওই নৌকা কুখ্যাত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ত্রেন দে আরাগুয়ার জন্য কাজ করছিল। ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘হামলায় ১১ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। সেনাবাহিনীর কেউ এই অভিযানে আহত হননি। যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে মাদক প্রবেশ করানোর কথা চিন্তা করছেন, তাঁদের জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা। সচেতন হোন!’
তবে, এখনো হামলা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সামাজিক মাধ্যমে শুধু জানিয়েছেন যে, হামলাটি ‘দক্ষিণ ক্যারিবীয় সাগরে’ হয়েছে, তবে নির্দিষ্ট কোনো স্থানের কথা তিনি বলেননি। ট্রাম্প জানিয়েছেন, নৌকায় থাকা লোকজন ছিল ‘মাদক সন্ত্রাসী’ (নার্কোটেররিস্ট), যারা আন্তর্জাতিক জলসীমায় অবস্থান করে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে মাদক পাচার করছিল।
মঙ্গলবার সকালে এই হামলা চালানো হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র-ভেনেজুয়েলার মধ্যে উত্তেজনা চলছে। গতকালের এই হামলায় আরও চড়ল উত্তেজনার পারদ। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে দেশের বাইরে ছড়িয়ে থাকা অপরাধী গ্যাংগুলোকে সংগঠিত করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে আসছেন ট্রাম্প। যদিও এই অভিযোগের সপক্ষে কোনো প্রমাণ তিনি দিতে পারেননি।
ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে মাদক চোরাচালানকারীদের বিরুদ্ধে এবারই প্রথম সরাসরি কার্যকর অভিযান চালাল সামরিক বাহিনী। এর আগে, মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে গত মাসে ক্যারিবীয় অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, বর্তমানে ক্যারিবীয় অঞ্চলে সাতটি যুদ্ধজাহাজ এবং একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন মোতায়েন করা আছে অথবা শিগগিরই সেখানে পৌঁছাবে। সব মিলিয়ে এসব নৌযানে সাড়ে চার হাজারের বেশি নৌসেনা ও মেরিন সেনা রয়েছেন।
এদিকে, এই সামরিক মোতায়েনের কারণে ভেনেজুয়েলার সঙ্গে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো ইতিমধ্যে নিজেদের উপকূলে সামরিক শক্তি বাড়িয়েছেন। গত সোমবার মাদুরো সতর্ক করে বলেছেন যে, তার দেশ যদি হামলার শিকার হয়, তবে তিনি ভেনেজুয়েলাকে একটি ‘অস্ত্রধারী প্রজাতন্ত্র’ হিসেবে ঘোষণা করবেন।
মাদুরো দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন যে, সরকার তার বিরোধী দলের পক্ষ হয়ে ভেনেজুয়েলার রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে। সোমবারের ভাষণে তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘সামরিক হুমকির মাধ্যমে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করার’ অভিযোগ আনেন। এদিকে, ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে ভেনেজুয়েলার প্রতি যে ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের নীতি নিয়েছিলেন, দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে কিছুটা শীতল সম্পর্কের আশা থাকলেও তিনি আবার সেই নীতিতেই ফিরে এসেছেন। জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর, ট্রাম্প তার বিশেষ দূত রিচার্ড গ্রেনেলকে ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে মাদুরোর সঙ্গে দেখা করতে পাঠান। গ্রেনেল সেই সফর থেকে ছয়জন আমেরিকান বন্দীকে মুক্ত করে ফিরিয়ে আনেন। মার্চ মাসের মধ্যে ভেনেজুয়েলা যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাসিতদের গ্রহণ করতে সম্মত হয়। এরপর থেকে আরও অনেক বন্দী মুক্তি ও বিনিময় হয়েছে।
তবে ট্রাম্প প্রশাসন ভেনেজুয়েলার ওপর ক্রমশ চাপ বাড়িয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধকালীন আইন ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’ প্রয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্রের বসবাসকারী ভেনেজুয়েলানদের কারাবন্দী করছেন ট্রাম্প। তাঁর প্রশাসন বারবার ত্রেন দে আরাগুয়া গ্যাংয়ের সঙ্গে ভেনেজুয়েলা সরকারের সরাসরি যোগসূত্র দেখিয়েছে। ট্রাম্পের মতে, মাদুরো এই গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে ‘মাদক-সন্ত্রাসবাদী’ কৌশল হিসেবে গোষ্ঠীটিকে ব্যবহার করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত মাসে ট্রাম্প মাদুরোর গ্রেপ্তারের জন্য পুরস্কারের পরিমাণ ১৫ মিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫০ মিলিয়ন ডলার ঘোষণা করেন। তবে মাদুরো এই গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। এমনকি গোয়েন্দা বিভাগের অন্তত দুটি প্রতিবেদনে ট্রাম্প প্রশাসনের দাবির বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করা হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, মে মাসে প্রকাশিত একটি ডিক্লাসিফাইড ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স কাউন্সিল রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, মাদুরোর সরকারের ‘সম্ভবত ত্রেন দে আরাগুয়ার সঙ্গে সহযোগিতা করার কোনো নীতি নেই’। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রে এই গ্যাংটির কার্যক্রম ‘পরিচালনা করছেন না’। তবে প্রতিবেদনে এ ও বলা হয়েছে যে ভেনেজুয়েলা এমন একটি ‘সহায়ক পরিবেশ’ তৈরি করে রেখেছে, যা ত্রেন দে আরাগুয়াকে তাদের কার্যক্রম চালাতে সাহায্য করে।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.